ফরজ দায়িত্ব: সন্তান ও পিতার পারস্পরিক অধিকারের নিখুঁত সংশ্লেষ
ডক্টর মুহাম্মাদ ফারুক হুসাইন। প্রকাশ: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫
মিডিয়া মিহির: নবীর উত্তরাধিকারসূত্র —নাহজুল বালাগা থেকে একটি মর্মস্পর্শী বাণীতে— ইমাম আলী (আ) বলেছেন, সন্তানের পক্ষে পিতার ওপর কিছু মৌলিক অধিকার আছে, এবং একইভাবে পিতারও সন্তানের প্রতি কিছু অবিচ্ছেদ্য দায়িত্ব রয়েছে। এই দর্শন ইসলামিক পরিবারব্যবস্থার উপরিভাগীয় নৈতিক ও শিষ্টাচারের ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত।
ইমাম আলী (আ) বলেছেন: সন্তানের পিতা-মাতার প্রতি একটি অধিকার আছে, ঠিক তেমনই পিতারও সন্তানের প্রতি কিছু অধিকার রয়েছে। সন্তানের অধিকার হলো— তার বাবার উচিত তাকে একটি সুন্দর ও অর্থবহ নাম প্রদান করা, তার চরিত্র ও শিষ্টাচারকে সুন্দরভাবে গড়ে তোলা, এবং তাকে পবিত্র কুরআন শিক্ষা প্রদান করা।
বিশ্লেষণাত্মক ব্যাখ্যা
ইমাম আলী (আ) পরিবারকে কেবল রক্তের বন্ধনে সীমাবদ্ধ রাখেননি; বরং প্রতিটি সম্পর্ককে নৈতিক শিক্ষা, আচার-ব্যবহার ও ধর্মীয় শিক্ষার আলোকে পূর্ণ করার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন।
নামের সৌন্দর্য
একটি নাম কেবল পরিচয়ের বাহন নয়; এটি শিশুর আত্মপরিচয়ের প্রথম ভিত্তি। সুন্দর ও অর্থবহ নাম তার জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে মর্যাদা ও পরিচ্ছন্নতার প্রতীক হয়ে ওঠে। নামের ভেতর নিহিত থাকে আশা, আদর্শ ও ভবিষ্যতের দিশা।
চরিত্র ও শিষ্টাচার
শিশুর চরিত্র গঠন পিতার অন্যতম গুরুদায়িত্ব। নৈতিক শিক্ষা ও শিষ্টাচার তাকে সমাজে সুসংস্কৃত, দায়িত্বশীল ও মানবিক করে তোলে। চরিত্রের সৌন্দর্যই মানুষের প্রকৃত সম্পদ, যা তাকে জীবনের প্রতিটি পরীক্ষায় দৃঢ় রাখে।
কুরআন শিক্ষা
পবিত্র কুরআনের শিক্ষা সন্তানের আধ্যাত্মিক বিকাশের মূল ভিত্তি। এটি তাকে আল্লাহর পথে পরিচালিত করে, জীবনের প্রতিটি সিদ্ধান্তে নৈতিক আলো জ্বালায়। ধর্মীয় জ্ঞান তাকে শুধু একজন ধর্মপ্রাণ মানুষই নয়, বরং সমাজের জন্য কল্যাণকর নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলে।
উপসংহার
ইমাম আলী (আ)-এর এই বাণী আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে পরিবার কেবল বংশগত সম্পর্ক নয়; এটি নৈতিকতা ও আধ্যাত্মিকতার এক পবিত্র প্রতিষ্ঠান। পিতা সন্তানের জন্য শুধু অভিভাবক নন, তিনি তার পরিচয়, চরিত্র ও বিশ্বাসের স্থপতি। আর সন্তানও পিতার প্রতি শ্রদ্ধা ও আনুগত্যের মাধ্যমে এই সম্পর্ককে পূর্ণতা দেয়।
এই পারস্পরিক অধিকার ও দায়িত্বই ইসলামিক পরিবারব্যবস্থার মূল দর্শন— যেখানে ভালোবাসা, নৈতিকতা ও ধর্মীয় শিক্ষা মিলেমিশে গড়ে তোলে এক সুশৃঙ্খল ও আলোকিত সমাজ।
সূত্র: নাহজুল বালাগা,হিকমাত ,৩৯৯।



