ইতিহাসজীবনযাপনবিশেষ সংবাদবিশ্ব

প্রাচীন গ্রীস ও রোমে নারীর নীরবতা: অধিকারহীনতার দীর্ঘ ছায়া

ডক্টর মুহাম্মাদ ফারুক হুসাইন। প্রকাশ: ১১ নভেম্বর ২০২৫

মিডিয়া মিহির: প্রাচীন গ্রীক ও রোমান সমাজে নারী ছিল অধিকারহীন, তুচ্ছ ও পুরুষ–নির্ভর। তাদের জীবন, বিবাহ, সম্পত্তি, এবং বিচ্ছেদ সবই পুরুষের নিয়ন্ত্রণে। নারীর ভালো কাজে পুরুষই লাভ করত, কিন্তু দোষ করলে কেবল নারী নিজেই শাস্তি ভোগ করত। পরিবারের সংরক্ষণ ও প্রজন্মের উত্তরাধিকার কেবল পুত্র সন্তানদের উপর নির্ভর করত। আল্লামা তাবাতাবাই (রহ.)–এর তাফসির আল-মিজান থেকে জানা যায়, এই সমাজে নারীর দমন, অধিকারহীনতা এবং সামাজিক অবস্থা কতটা সীমিত ছিল।

রোম ও গ্রীস: নারী—তুচ্ছ, অধিকারহীন ও পুরুষনির্ভর

প্রাচীন রোমান সমাজে নারীর অস্তিত্বকে কেবল পুরুষের আনুগত্যশীল সত্তা হিসেবে ধরা হতো। পরিবারে তার জীবন, স্বাধীনতা, বিবাহ, তালাক এবং সম্পত্তি—সবই পুরুষের নিয়ন্ত্রণে। পরিবার প্রধান বা পিতা বা স্বামী যিনি হতেন, তার ইচ্ছা ছিল চূড়ান্ত।

১.নারীকে বিক্রি করা, উপহার দেওয়া, বা অন্যের সেবা হিসেবে ব্যবহার করা হতো।

২.যদি নারী কোনো ভুল বা অপরাধ করত, শাস্তি ভোগ করত নিজেই।

৩.তার সম্পদ—যেমন কনে বা যৌতুক—পুরুষই ব্যবহার করতে পারত।

৪.উত্তরাধিকার, সামাজিক আইন এবং বৈধ লেনদেন নারীর জন্য প্রযোজ্য ছিল না।

গ্রীক সমাজে নারীর অবস্থা

গ্রীসের নারীর অবস্থা রোমের সাথে প্রায় সমান।

১.পরিবার ও সমাজের মূল ভিত্তি ছিল পুরুষ।

২.নারীর স্বাধীনতা বা নিজস্ব ইচ্ছার কোনো স্থান ছিল না।

৩.যে কোনও সামাজিক বা অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত পুরুষ অভিভাবকের হাতে।

৪.নারী শুধুমাত্র সন্তান উৎপাদনের মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত।

সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক—যদি নারী কোনো ভালো কাজ করত, পুরুষই লাভবান হতো; কিন্তু দোষ করলে, কেবল নারী নিজেই শাস্তি ভোগ করত। এই দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট করে যে, নারীকে কমজোর, উপরের অবলম্বনের উপর নির্ভরশীল এবং সমাজের ক্ষতিকারক অংশ হিসেবে দেখা হতো।

পুত্র সন্তান ও পরিবারের সংরক্ষণ

পুরুষ প্রাধান্য ও প্রজন্ম সংরক্ষণের কারণে, পরিবারে কেবল পুত্র সন্তানই মূল উত্তরাধিকারী।
যদি কারও কোনো পুত্র সন্তান না থাকত, তারা পুত্র দত্তক নিত, যাতে পরিবার ও বংশাবলী অব্যাহত থাকে।
এই দত্তক সন্তানকেও সকল আইনগত অধিকার এবং উত্তরাধিকার দেয়া হতো, যেন পরিবারের নাম ও সম্পদ সংরক্ষিত থাকে।

বিবাহ ও বিচ্ছেদ

১.রোম ও গ্রীস—উভয় সমাজে বহুপতিত্ব বৈধ।

২.গ্রীসে একাধিক স্ত্রী থাকলেও একজনকে আইনি ও স্বীকৃত স্ত্রী ধরা হতো, বাকি অস্বীকৃত।

৩.নারীর বিবাহ এবং বিচ্ছেদ সবই পুরুষের অধীনে।

সারসংক্ষেপ

প্রাচীন রোম ও গ্রীসে নারী ছিল:

১-অধিকারহীন ও পুরুষনির্ভর,

২-সমাজ ও পরিবারে স্বতন্ত্র সত্তা নয়,

৩-শুধু পুরুষের উপকারে ব্যবহৃত,

৪-শাস্তি ভোগে নারীর দায়িত্ব, লাভ পুরুষের,

৫-পরিবার ও প্রজন্মের সংরক্ষণ পুত্র সন্তানের ওপর নির্ভর।

আল্লামা তাবাতাবাই (রহ.)–এর বিশ্লেষণ অনুযায়ী, এই ইতিহাস ইসলামের নারী–অধিকার ও মর্যাদার মূল্য আরও স্পষ্ট করে।

সূত্র: তাফসির আল-মিজান, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৪০০–৪০১।

আরও পড়ুন

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button