পশ্চিম তীরের অধিগ্রহণ: ইসরায়েলের গুপ্ত কৌশল
রাসেল আহমেদ | প্রকাশ: ২৬ অক্টোবর, ২০২৫

মিডিয়া মিহির: ইসরায়েলের পশ্চিম তীরকে অধিগ্রহণের পরিকল্পনা শুধু গাজায় তার সামরিক ব্যর্থতাকে আড়াল করছে না, এটি আঞ্চলিক সম্প্রসারণের নতুন ধাপও নির্দেশ করছে। আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়ার মুখে আপাতত স্থগিত থাকলেও, এই পদক্ষেপ ভবিষ্যতে নতুন সংঘাত ও রাজনৈতিক উত্তেজনার সূচনা হতে পারে।
হামাসের কৌশল এবং ইসরায়েলের পরাজয়
শার্ম আল-শেইখ শীর্ষ সম্মেলনের পর এবং কিছু আরব ও ইউরোপীয় দেশের ট্রাম্প শান্তি পরিকল্পনার সমর্থন ও বাস্তবায়ন শুরু হওয়ার পর, হামাস পরিস্থিতি দক্ষতার সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়।
-
বন্দি মুক্তির মাধ্যমে জায়োনিস্ট শাসনব্যবস্থা আক্রমণের তীব্রতা কমিয়ে নিজেদের সেনাবাহিনীকে গাজা ও অধিকৃত অঞ্চলের সীমান্ত পর্যন্ত প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়।
-
যুদ্ধবিরতি বজায় রাখা এবং নিরীহ জনগণের সহায়তা প্রদান ইসরায়েলের জন্য একটি স্পষ্ট পরাজয় হিসেবে চিহ্নিত হয়।
ইসরায়েল আগে দাবি করেছিল যে তারা হামাস ও গাজাকে ধ্বংস করবে, কিন্তু বাস্তবতা প্রমাণ করল তারা ব্যর্থ। এই ব্যর্থতা আড়াল করার জন্য ইসরায়েল নতুন ফ্রন্ট খুলেছে—কনেসেটে পশ্চিম তীর এবং পূর্ব জেরুজালেমকে অধিকৃত ফিলিস্তিনের সঙ্গে সংযুক্ত করার দুটি বিল পেশ করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
এই ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে তা দ্রুত আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে:
-
গাজায় গণহত্যা, যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন এবং শান্তি পরিকল্পনার বাধা থেকে মনোযোগ কিছুটা সরিয়ে নিয়েছে ।
-
নেফতানিয়াহু ইসরায়েলকে আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে প্রদর্শন করার সুযোগ পেয়েছেন।
-
জাতিসংঘ, ইউরোপীয় দেশ, আরব সরকার এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্রুত বিরোধিতার কারণে নেতানিয়াহু ঘোষণা করেছেন যে এটি বর্তমানে অগ্রাধিকার পাচ্ছে না এবং কেবল ঘরোয়া রাজনৈতিক কৌশল মাত্র।
ট্রাম্পের কৌশল এবং পশ্চিম তীরের অধিগ্রহণ
যদিও আপাতত স্থগিত আছে, কিন্তু এটি নতুন ধাপের সূচনা হিসেবে দেখা উচিত।
-
ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের “গ্র্যান্ড ডিল” পরিকল্পনার মূল লক্ষ্য ছিল পশ্চিম তীরকে অধিকৃত ভূখণ্ডের সঙ্গে সংযুক্ত করা।
-
মার্কিন দূতাবাস জেরুজালেমে স্থানান্তরের মাধ্যমে দেখা গেছে, পশ্চিম তীরের পূর্ণ অধিগ্রহণ একটি চলমান মার্কিন কৌশল।
-
১. শান্তি পরিকল্পনাকে সম্পন্ন করা।
২. আন্তর্জাতিক চাপ ও নেতিবাচক অবস্থান সত্ত্বেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে আরও বিচ্ছিন্ন হতে দেওয়া এড়িয়ে চলাভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও সম্ভাব্য সংঘাত
-
পশ্চিমা দেশগুলোর বিরোধতা বা নেতানিয়াহুর বক্তব্য এই পরিকল্পনার শেষ নয়।
-
শান্তি পরিকল্পনার ধাপগুলো সম্পন্ন হলে অধিগ্রহণের বিষয়টি পুনরায় উঠে আসতে পারে।
-
সম্ভবত মার্কিন সমর্থন বা নীরবতার সঙ্গে এটি বাস্তবায়িত হতে পারে।
-
ট্রাম্প শান্তি পরিকল্পনা অগ্রসর করার জন্য আপাতত অধিগ্রহণ সাময়িকভাবে স্থগিত করছেন, তবে যদি পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়, পশ্চিম তীরে সম্প্রসারণবাদী নীতি পুনরায় চালু হতে পারে।
দুই রাষ্ট্র সমাধানের পরিপন্থী পদক্ষেপ
-
এই পদক্ষেপ ১৯৪৮ সালের জাতিসংঘের রেজোলিউশনের “দুই রাষ্ট্র সমাধান” পরিকল্পনার সম্পূর্ণ বিপরীত।
-
ওই রেজোলিউশনে দুটি রাষ্ট্র গঠনের কথা বলা হয়েছিল: আরব (ফিলিস্তিন) এবং ইহুদি (ইসরায়েল)।
-
জিওনিস্ট শাসনব্যবস্থার সাম্প্রতিক পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক রেজোলিউশন এবং বিশ্বের বেশিরভাগ দেশের বর্তমান অবস্থানেরও বিপরীত।
আন্তর্জাতিক সতর্কতা ও ভবিষ্যৎ ঝুঁকি
-
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশেষ করে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান, এ বিষয় সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করবে।
-
পশ্চিম তীরের অধিগ্রহণ কোনো সাধারণ বা সাময়িক বিষয় নয়।
-
এই প্রবণতা চলতে থাকলে:
– অধিকৃত ভূখণ্ডের পরিধি বৃদ্ধি পাবে,
- -ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধ তীব্র হবে,-
- – আঞ্চলিক পরিস্থিতি সংকটপূর্ণ পর্যায়ে ঠেলে যেতে পারে।



