নারীরা—ইসলামি উম্মাহর পরিচয় ও সংস্কৃতির দৃঢ় স্তম্ভ
রাসেল আহমেদ | প্রকাশ: ৮ ডিসেম্বর, ২০২৫

মিডিয়া মিহির: ইরানের বিশিষ্ট মাহদিয়া ফাল্লাহি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, সমাজে নারীরা কোনো গৌণ বা পরিপূরক অংশ নন; বরং তাঁরা “অর্থ, ঈমান ও সংস্কৃতির উৎপাদক কেন্দ্র” হিসেবে কাজ করেন। তাঁরা ধর্মীয় মূল্যবোধ, ঐতিহাসিক স্মৃতি এবং সভ্যতাগত ধারণা এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে পৌঁছে দিয়ে উম্মাহর ভিতকে শক্তিশালী করে তুলেন।
তিনি বলেন, ইসলামি সভ্যতা নির্মাণে নারীর ভূমিকা মৌলিক ও নির্ধারণমূলক। ইতিহাস ও ধর্মীয় সূত্রে স্পষ্ট— অনেক গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে নারীরা পরিবর্তন-নির্মাতা ও দিকনির্দেশক শক্তি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
ইতিহাসে নারীর অবস্থান
মাহদিয়া ফাল্লাহি বলেন, ইসলামি ইতিহাসে দেখা যায়— সামাজিক প্রতিরোধ থেকে শুরু করে পরিবার ও গোত্রের সংকট— বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে নারীরা দৃঢ় ভূমিকা পালন করেছেন। সচেতন ও প্রজ্ঞাবান নারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া উম্মাহ গঠন কখনই পূর্ণ হয় না।
উম্মাহ নির্মাণে নারীর তিনটি মূল দায়িত্ব
১. হয়তী বা পরিচিতিমূলক ভূমিকা: করুণা, ন্যায়, ইমান, মানবিকতা ও সম্মানের মূল্যবোধ প্রথমে পরিবার থেকে সমাজে প্রবাহিত হয় নারীর মাধ্যমে।
২. লালন-পালন ও শিক্ষামূলক ভূমিকা: সচেতন, প্রজ্ঞাবান ও আত্মমর্যাদাবোধসম্পন্ন নারীরা সৃষ্টিশীল, দায়িত্বশীল ও দৃঢ়চেতা প্রজন্ম গড়ে তোলেন—যারা ভবিষ্যৎ উম্মাহর চালিকাশক্তি।
৩. সামাজিক ও সভ্যতাগত ভূমিকা: বিজ্ঞান, সংস্কৃতি, অর্থনীতি ও সমাজের অর্ধেক সামর্থ্য সক্রিয় করে নারীরা ইসলামি উম্মাহর নরম ক্ষমতাকে শক্তিশালী করেন।
ইসলামী পরিচয়ে নারীর আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধির তিনটি পরিপূরক পদক্ষেপ
১. বাস্তব ও অনুপ্রেরণাদায়ী রোল মডেল তুলে ধরা: ইতিহাস ও আধুনিক সময়ের সেই মুসলিম নারীদের সামনে আনতে হবে, যাঁরা নেতৃত্ব, প্রজ্ঞা ও সাহসে অনন্য উদাহরণ।
২. বৈজ্ঞানিক, সাংস্কৃতিক ও দক্ষতাভিত্তিক ক্ষমতায়ন: সক্ষমতা ছাড়া পরিচয় টেকসই হয় না। জীবনদক্ষতা, গণমাধ্যম-সচেতনতা ও সঠিক ধর্মীয় জ্ঞান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
৩. নারীর সঠিক ও মর্যাদাবান সামাজিক চিত্র প্রতিষ্ঠা: গণমাধ্যম ও শিক্ষা ব্যবস্থায় নারীর মানবিক ও বাস্তব পরিচয় তুলে ধরলে নেতিবাচক চাপ কমে, আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পায়। এছাড়া নারীদের অভিজ্ঞতা নিয়ে মুক্ত আলোচনার প্ল্যাটফর্ম গড়ে উঠলে এটি একটি সহায়ক নেটওয়ার্ক তৈরি করে—যা ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাকে সামষ্টিক শক্তিতে রূপান্তরিত করে।
নারীর ক্ষমতায়নের চারটি স্তর
১. পরিবার: নারীর স্নেহ, আস্থা, প্রশান্তি ও সচেতন লালন-পালন উম্মাহর ভিত্তিকে মজবুত করে।
২. সমাজ: স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রম, সাংস্কৃতিক নেটওয়ার্ক ও জনগণভিত্তিক উদ্যোগ সামাজিক আস্থা ও সংযোগ বৃদ্ধি করে।
৩. শিক্ষা ও পেশাগত ক্ষেত্র: ন্যায়সংগত শিক্ষার সুযোগ ও পেশাগত অগ্রগতি সমগ্র সমাজকে শক্তিশালী করে তোলে।
৪. সভ্যতাগত ক্ষেত্র: নারীরা ইসলামি মূল্যবোধ, ন্যায় ও মর্যাদার ধারক; তাঁদের বর্ণনা ভবিষ্যৎ উম্মাহর পরিচয় নির্মাণে মৌলিক ভূমিকা রাখে।
মাহদিয়া ফাল্লাহি বলেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো—শুধু উপস্থিতি নয়, বরং প্রভাব সৃষ্টি করা। যদি নারীর সামর্থ্যকে সঠিক নীতি-পরিকল্পনা, কার্যকর যোগাযোগ নেটওয়ার্ক এবং সহায়ক শিক্ষা কাঠামোর মাধ্যমে সংগঠিত করা যায়, তবে তাঁরা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংকট মোকাবেলায় শক্তিশালী হাতিয়ার হতে পারেন। এতে ইসলামি উম্মাহ শুধু পরিচয় সংকট থেকে রক্ষা পায় না, বরং স্থিতি, বিকাশ ও দীর্ঘমেয়াদি সমৃদ্ধির দিকে অগ্রসর হয়।



