ধর্ম ও বিশ্বাসবিশ্ব

নামাজ না পড়লে কি মানুষ জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে?

ডক্টর ‍মুহাম্মাদ ফারুক হুসাইন। প্রকাশ: ৩ নভেম্বর ২০২৫

মিডিয়া মিহির: ইসলামে নামাজকে হাকুল্লাহ (আল্লাহর অধিকার) বলা হয়েছে। অনেকেই প্রশ্ন করেন—যদি কেউ নামাজ না পড়ে, তাহলে কি আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন এবং জান্নাতে প্রবেশের সুযোগ দেবেন? ইসলামী চিন্তায় এ প্রশ্নকে ব্যাখ্যা করার জন্য নামাজ ও আল্লাহর করুণা, মানুষের আত্মা এবং গুণাহের প্রভাবকে একটি চিকিৎসা-উপমা দিয়ে ব্যাখ্যা করা হয়।

১. নামাজের উপমা: রোগী ও অস্ত্রোপচার

যদি একটি শিশু অসুস্থ হয়, মা তাকে ডাক্তার কাছে নিয়ে যায়। ডাক্তার দেখেন যে শরীরে একটি গঠনগত সমস্যা বা অসুখ আছে, যা শুধুমাত্র অস্ত্রোপচার করে মুছে ফেলা সম্ভব। যদিও অস্ত্রোপচার ব্যথাদায়ক, মা কিন্তু বলে না—“ব্যথা হচ্ছে, তাই করব না।” বরং সে চায় তার সন্তান সুস্থ হোক। ঠিক এভাবেই, আল্লাহর দয়া ও করুণা আমাদের প্রতি। তিনি চান না যে, আমরা পাপের অশুদ্ধ অবস্থায় জান্নাতে প্রবেশ করি। যদি আমরা প্রস্তুত না হই, আমাদের আত্মা পরিষ্কার করা প্রয়োজন।

২. পাপ ও অব্যবস্থার চিকিৎসা

ইসলামে যা কৃত বা অব্যবহৃত তা হলো আত্মার সংক্রমণ বা অসুখ।

১- কোনো ফরজ ইগনোর করলে বা হারাম করলে আমরা আধ্যাত্মিক ভাইরাস নিজের মধ্যে ঢুকাই।

২- এই অসুখ অপসারণ না হলে আমরা আল্লাহর আশীর্বাদ ও জান্নাতের সুখ অনুভব করতে পারব না।

একটি উদাহরণ—যদি কেউ দাঁতহীন হয়, সে মিষ্টি ফল বা পুষ্টিকর খাবারের স্বাদ নিতে পারবে না। একইভাবে, পাপ ও ফারজ না-পড়া আত্মাকে জান্নাতের পূর্ণ আনন্দ থেকে বঞ্চিত করে। আল্লাহ আমাদের ভালোবাসেন, তাই আমাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।

৩. চিকিৎসার উপায়: তাওবা ও পরিশোধ

পাপ বা আত্মার অসুখ দূর করার জন্য কয়েকটি উপায় আছে:

১.তাওবা ও পাপের প্রতিকার—যদি কেউ অনিচ্ছাকৃত বা ভুলক্রমে পাপ করেছে, কিন্তু পরে ক্ষমা চেয়ে তাওবা করে, আল্লাহ তা মাফ করেন।

২.কষ্ট ও পরীক্ষা—মানব জীবন ও পরকালে সম্মুখীন হওয়া কঠিন পরীক্ষা বা যন্ত্রণা আত্মাকে পরিশোধ করে।

৩.কবর ও কিয়ামতের “অস্ত্রোপচার”—কোনো কোনো হাদিসে বর্ণিত কষ্ট, যেমন কবরের যন্ত্রণা, কিয়ামতের শাস্তি, হলো আত্মাকে সুস্থ করার “চিকিৎসা কক্ষ”।

অর্থাৎ, আল্লাহর শাস্তি কোনো শত্রুতা নয়; বরং এটি রোগমুক্তির প্রক্রিয়া।

৪. সচেতন ও অনিচ্ছাকৃত পাপের পার্থক্য

১.অনিচ্ছাকৃত বা ভুলক্রমে পাপ: আল্লাহ করুণাময়, এবং তাওবার মাধ্যমে ক্ষমা প্রদান করেন।

২.জ্ঞানসম্পন্নভাবে ও ইচ্ছাকৃত পাপ: যদি কেউ দৃঢ়ভাবে নামাজ এড়ায়, বা বলে—“আমি নামাজ করতে চাই না”—তাহলে আল্লাহ তাকে শাস্তির মাধ্যমে পরিশোধ করাবেন। এটি জান্নাতে প্রবেশের জন্য অপরিহার্য।

নামাজ শুধু একটি আধ্যাত্মিক কর্তব্য নয়; এটি আত্মাকে পাপের সংক্রমণ থেকে মুক্ত রাখে। আল্লাহর দয়া ও করুণা আমাদের সেই সংক্রমণ পরিষ্কার করার উপায়।

১.অনিচ্ছাকৃত ও ত্রুটিপূর্ণ অবস্থায় তাওবা ও প্রতিকার যথেষ্ট।

২.ইচ্ছাকৃত অবজ্ঞা ও অমান্যতা হলে পরিশোধের প্রয়োজন।

ফলস্বরূপ, আল্লাহর উদ্দেশ্য একটাই—আমাদের আত্মাকে পরিষ্কার ও প্রস্তুত করে সুখের জান্নাতে প্রবেশ করানো, যেখানে কোনো কষ্ট, ব্যথা বা অসুস্থতা থাকবে না।

সূত্র:হাওযা-ই ইলমিয়ার (ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের) প্রচার ও সাংস্কৃতিক বিষয়ক সহকারী দপ্তরের ওয়েবসাইট

আরও পড়ুন 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button