জীবনযাপনকুরআনকুরআন শিক্ষাতাফসীরধর্ম ও বিশ্বাসবিশেষ সংবাদবিশ্ব

ধর্মের নামে ধোঁকা: অজ্ঞতার সুযোগে ইসলামবিরোধী ষড়যন্ত্র

ডক্টর মুহাম্মাদ ফারুক হুসাইন। প্রকাশ: ১৬ অক্টোবর ২০২৫

মিডিয়া মিহির: ধর্মীয় আবেগ যখন অজ্ঞতার ছায়ায় পরিচালিত হয়, তখন তা সত্যের রক্ষাকবচ নয়, বরং শত্রুর অস্ত্র হয়ে ওঠে। শহীদ মুর্তজা মোতাহারির ভাষ্যে উঠে এসেছে—কিভাবে শত্রুরা ইসলামকে ব্যবহার করে ইসলামকেই আঘাত করে, আর কিভাবে অজ্ঞতা ও কুপরিকল্পনা একটি জাতিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যায়।

পশ্চিমা ঔপনিবেশিক শক্তি ও ইসলামবিরোধী শত্রুরা বহুবার প্রমাণ করেছে, তারা ধর্মীয় আবেগকে উসকে দিয়ে সেই শক্তিকে ইসলামবিরুদ্ধ কাজে ব্যবহার করে। এমনকি আমাদের সমাজেও দেখা যায়, কিছু মুনাফিক আহলে বাইতের পবিত্র নাম ব্যবহার করে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য ইসলাম ও কুরআনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়।

শহীদ মুর্তজা মোতাহারি তাঁর গ্রন্থ আকর্ষণ ও বিকর্ষণ: ইমাম আলী (আ.)”-এ লিখেছেন, যখন অজ্ঞ ও অচেতন ব্যক্তিরা সমাজে ধর্মীয়তার প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়, তখন চতুর স্বার্থপররা তাদেরকে নিজেদের হাতিয়ার বানিয়ে ফেলে। তারা এই অজ্ঞদের ব্যবহার করে প্রকৃত সংস্কারক ও চিন্তাবিদদের বিরুদ্ধে এক শক্তিশালী বাধা তৈরি করে।

ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, ইসলামবিরোধী শক্তিগুলো বহুবার ইসলামকেই অস্ত্র বানিয়ে ইসলামকে আঘাত করেছে। পশ্চিমা ঔপনিবেশিক শক্তি এই কৌশলে অভিজ্ঞ—বিশেষ করে মুসলিমদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করতে তারা ধর্মীয় আবেগকে কৃত্রিমভাবে উসকে দেয়।

কতটা লজ্জাজনক, যখন একজন সৎ ও সাহসী মুসলমান বিদেশি প্রভাব দূর করতে উদ্যোগী হন, তখন সেই জনগণ—যাদের মুক্তির জন্য তিনি সংগ্রাম করছেন—ধর্ম ও মাযহাবের নামে তার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যায়।

হ্যাঁ, যদি সাধারণ মানুষ অজ্ঞ ও অচেতন থাকে, তবে মুনাফিকরা ইসলামকেই ঢাল বানিয়ে ষড়যন্ত্র চালায়।

আমাদের ইরানেও, যেখানে জনগণ আহলে বাইতের প্রতি ভালোবাসা ও আনুগত্যে গর্ববোধ করে, কিছু মুনাফিক সেই পবিত্র নাম ও “বেলায়াতে আহলে বাইত”-এর মর্যাদাকে ব্যবহার করে কুরআন, ইসলাম ও আহলে বাইতের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়—ইহুদিবাদী শক্তির স্বার্থে।

এটি ইসলাম, কুরআন, নবী করিম (সা.) এবং তাঁর পবিত্র পরিবারকে আঘাত করার সবচেয়ে জঘন্য রূপ।

নবী করিম (সা.) বলেন:

«إِنِّي مَا أَخَافُ عَلَى أُمَّتِي الْفَقْرَ، وَلَكِنْ أَخَافُ عَلَيْهِمْ سُوءَ التَّدْبِيرِ» আমি আমার উম্মতের জন্য দারিদ্র্যের ভয় করি না, বরং তাদের কুপরিকল্পনার ভয় করি।

অর্থাৎ, অর্থনৈতিক সংকট নয়, বরং চিন্তার দৈন্যই জাতিকে ধ্বংস করে। যে ক্ষতি বুদ্ধিবৃত্তিক দারিদ্র্য আনে, তা অর্থনৈতিক দারিদ্র্য কখনো আনতে পারে না।

 উপসংহার:

ধর্মের নামে চালানো প্রতারণা, অজ্ঞতার সুযোগে গড়ে ওঠা ষড়যন্ত্র, এবং পবিত্র নামের অপব্যবহার—এই সবই ইসলামকে ভিতর থেকে দুর্বল করে। শহীদ মুতাহারির সতর্কবাণী আমাদের শেখায়, সত্যিকারের ধর্মচর্চা মানে শুধু আবেগ নয়, বরং জ্ঞান, সচেতনতা ও সঠিক দিশার অনুসরণ। আর এই দিশা আসে সেইসব আলোকিত মনীষীদের কাছ থেকে, যারা ধর্মকে স্বার্থের নয়, সত্যের আলোয় দেখেন।

সূত্র: উস্তাদ মুর্তজা মোতাহারি,আকর্ষণ ও বিকর্ষণ: ((جاذبه و دافعه امام علی عইমাম আলী (আ.)পৃষ্ঠা ১৫১–১৫২।

আরও পড়ুন

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button