দুনিয়া চাইলে—তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ো; আখিরাত চাইলেও— তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ো: আল্লামা তাবাতাবায়ী
রাসেল আহমেদ | প্রকাশ: ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫

তিনি বলেন— নাজাফে অবস্থানকালে আমি একটি ভাড়াবাড়িতে বসবাস করছিলাম। তখনো কোনো আনুষ্ঠানিক দারস বা পাঠচক্রে অংশগ্রহণ শুরু করিনি। একদিন হঠাৎ দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ শুনি। দরজা খুলতেই এক মহান আলেম প্রবেশ করলেন, যাঁর চেহারায় ছিল অপার্থিব নূর ও আধ্যাত্মিক দীপ্তি। কথোপকথনের মধ্য দিয়ে তিনি প্রসিদ্ধ কবি হাতেফ ইসফাহানির একটি কবিতার অংশ আবৃত্তি করলেন—
“তোমার জন্য উৎসর্গিত হৃদয় ও প্রাণ,
তোমার পথে নিবেদিত সবকিছু—এই ও সেই।”
এরপর তিনি বলেন—“যে ব্যক্তি জ্ঞান অর্জনের উদ্দেশ্যে নাজাফে আসে, তার জন্য কেবল পাঠ্য জ্ঞান অর্জনই যথেষ্ট নয়; বরং আত্মশুদ্ধি, আত্মসংযম ও নফসের পরিশুদ্ধতার প্রতিও মনোযোগ দেওয়া অপরিহার্য।” এই মহান আলেম ছিলেন হাজী মির্জা আলী আকা কাজী।

এরপর কিছু সময় পর ‘সম্ভাব্য সত্তা’ (মুমকিনুল উজুদ) ও ‘অবশ্যসত্তা’ (ওয়াজিবুল উজুদ)-এর সম্পর্ক আমার কাছে জটিল হয়ে ওঠে। তবে হাফিজের একটি গজল পাঠের মাধ্যমে বিষয়টি আমার অন্তরে স্পষ্ট হয়। আমি উপলব্ধি করি, সম্ভব সত্তা সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর ওপর নির্ভরশীল এবং বান্দাদের প্রতি আল্লাহর আকর্ষণ তাঁর অসীম রহমত থেকে উদ্ভূত।
একদিন হাজী মির্জা আলী আকা কাজী আমার পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। তিনি থেমে কণ্ঠে স্নেহ ভরে বললেন—
“বৎস! যদি দুনিয়া চাও—তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করো; আর যদি আখিরাত চাও—তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করো।”
আল্লামা তাবাতাবায়ী (রহ.) বলেন, এই সংক্ষিপ্ত অথচ গভীর বাক্যটি আমার হৃদয়ে এমনভাবে প্রোথিত হয়ে যায় যে, জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত আমি তাঁর সান্নিধ্য ও আধ্যাত্মিক পথ থেকে বিচ্ছিন্ন হইনি। তাঁর নির্দেশনা ও শিষ্যত্বই আমার জীবন ও চেতনার মূল ভিত্তি হয়ে দাঁড়ায়।
গ্রন্থ: পাসদারানে হারিমে ইশ্ক (ভালোবাসার সীমান্তের প্রহরী), রচয়িতা: আয়াতুল্লাহ সাআদাত পরওয়ার (রহ.)
এই ঘটনা আমাদের জন্য এক অমূল্য শিক্ষা বহন করে—জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি আত্মশুদ্ধি, নফস নিয়ন্ত্রণ এবং আল্লাহর প্রতি গভীর সম্পর্ক অপরিহার্য। দুনিয়া বা আখিরাত, যেটি চাই, তাহাজ্জুদ নামাজে অভ্যস্ত হয়ে অন্তরের শুদ্ধি অর্জন করাই আমাদের আসল ধন। জীবনকে আলো করে তোলার সবচেয়ে শক্তিশালী মাধ্যম হলো নিয়মিত ইবাদত, ধৈর্য এবং আত্মসংযম।



