তুমি কি আল্লাহর পক্ষে শ্বাস নিচ্ছ, নাকি শয়তানের শিবিরে?
ডক্টর মুহাম্মাদ ফারুক হুসাইন। প্রকাশ: ১ নভেম্বর ২০২৫
মিডিয়া মিহির: মানুষের জীবনে নিরপেক্ষতার কোনো স্থান নেই। কুরআনের ভাষায়, মানুষ হয় আল্লাহর দাস, নয়তো শয়তানের দাস। মানুষের প্রতিটি চিন্তা, কর্ম ও সিদ্ধান্ত তাকে টেনে নেয়—হয় আল্লাহর পথে, নয়তো শয়তানের ফাঁদে। এই দ্বৈত বাস্তবতাকেই ইমাম জয়নুল আবিদীন (আ.) তাঁর দোয়ায় গভীরভাবে ব্যাখ্যা করেছেন।
মানবজীবনের দুই পথ: আল্লাহর দাসত্ব না শয়তানের দাসত্ব
আল্লাহ তায়ালার বাণী অনুযায়ী, মানুষ কখনোই দুই অবস্থার বাইরে নয়—সে হয় আল্লাহর দাস, নয়তো শয়তানের দাস। মানবজীবনের পুরো সময়জুড়েই সে মুখোমুখি থাকে দুটি শক্তির—একদিকে আল্লাহর সেনাদল, অন্যদিকে শয়তানের বাহিনী।
ইমাম জয়নুল আবিদীন (আ.) তাঁর সাহিফা সাজ্জাদিয়া–এর একটি দোয়ায় এভাবে প্রার্থনা করেছেন—
«وَاهْدِنِی لِلَّتِی هِیَ أَقْوَمُ وَ اسْتَعْمِلْنِی بِمَا هُوَ أَسْلَمُ»
হে আল্লাহ! আমাকে সর্বাধিক সোজা পথে পরিচালিত করো এবং নিরাপদতম কাজে নিযুক্ত করো।” (সাহিফা সাজ্জাদিয়া, দোয়া ১৪)
এই দোয়াটির গভীর তাৎপর্য বোঝার জন্য আমরা আল-কোরআনের নিম্নোক্ত আয়াতের দিকে তাকাতে পারি—
«أَلَمْ أَعْهَدْ إِلَیْکُمْ یَا بَنِی آدَمَ أَن لَّا تَعْبُدُوا الشَّیْطَانَ إِنَّهُ لَکُمْ عَدُوٌّ مُّبِینٌ وَأَنِ اعْبُدُونِی هَـٰذَا صِرَاطٌ مُّسْتَقِیمٌ»
হে আদমসন্তান! আমি কি তোমাদের সঙ্গে এই অঙ্গীকার করিনি যে, তোমরা শয়তানের উপাসনা করবে না? নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। আর আমাকেই উপাসনা করো—এই তো সরল পথ।” (সূরা ইয়াসিন, আয়াত ৬০)
এই আয়াতের আলোকে স্পষ্ট হয়—মানুষ হয় আল্লাহর দাস, নয়তো শয়তানের। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সে আসলে এই দুই শক্তির একটির অনুসারী। কারণ, আল্লাহর নবী ও ইমামদের শিক্ষা অনুযায়ী আজ্ঞাপালনই প্রকৃত উপাসনা। ইমাম জাফর সাদিক (আ.) বলেন—
«مَنْ أَطَاعَ رَجُلاً فِی مَعْصِیَةٍ فَقَدْ عَبَدَهُ»
যে কেউ কোনো ব্যক্তির অবাধ্যতার আদেশ মানে, সে আসলে তারই উপাসনা করে।” (উসূলে কাফি, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৩৯৮)
এই কারণেই ইমাম জয়নুল আবিদীন (আ.) আমাদের শিখিয়েছেন যেন আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি—তিনি যেন আমাদের পথনির্দেশের ভার নিজে গ্রহণ করেন, যেন তিনি আমাদের সর্বোত্তম পথে পরিচালিত করেন এবং আমাদের কর্মসমূহ নিরাপদ ও সঠিক পথে পরিচালিত হয়। কারণ, যদি আমরা আল্লাহর ইচ্ছা ও আনুগত্যের পথে না চলি, তবে অবশ্যম্ভাবীভাবে আমরা শয়তানের সেনাদলে পরিণত হব; তারই আদেশ পালন করব।
এমনকি কেউ যদি নিজেকে “স্বাধীন” মনে করে এবং দাবি করে যে সে ধর্মীয় বিধি-নিষেধ বা অন্যের প্রভাব থেকে মুক্ত, তবুও বাস্তবে সে হয়তো অচেতনভাবে শয়তানের দাসত্বে লিপ্ত—যেখানে শয়তান তাকে নিজের ইচ্ছামতো চালনা করে।
প্রত্যেক মানুষকে তার জীবনপথ ও কাজ পর্যালোচনা করতে হবে, যেন সে বুঝতে পারে—সে আসলে কোন শিবিরে আছে: সৃষ্টিকর্তার, নাকি শয়তানের? কারণ মানুষ চিরকাল এই দুই আহ্বানের মাঝখানে অবস্থান করে—একটি ডাকে আল্লাহর দিকে, অন্যটি টেনে নেয় শয়তানের দিকে।
পদ্যটিকা
১.সাহিফা সাজ্জাদিয়া, দোয়া ১৪।
২.সূরা ইয়াসিন, আয়াত ৬০।
৩.উসূলে কাফি, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৩৯৮।



