তাওহিদপরায়ণ সেই ব্যক্তি,যার ইচ্ছাশক্তি আল্লাহর রঙে রঞ্জিত
ডক্টর মুহাম্মাদ ফারুক হুসাইন। প্রকাশ: ১১ আক্টোবর ২০২৫
মিডিয়া মিহির: ইসলামের দৃষ্টিতে আত্মশুদ্ধি শুধু চরিত্র গঠন বা নৈতিক অনুশীলনের নাম নয়; বরং এর ভিত্তি নির্মিত হয় একক ও অবিচ্ছিন্ন তাওহিদের ওপর। যখন একজন মানুষ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে—সত্যিকার অস্তিত্ব, মালিকানা এবং প্রভাব বিস্তারের ক্ষমতা শুধু আল্লাহরই—তখন তার ভরসা, আশা, ভয়, ভালোবাসা এবং ঘৃণা সবকিছুই আল্লাহকেন্দ্রিক হয়ে যায়। সেই অবস্থায় তার ইচ্ছাশক্তি আর ব্যক্তিগত প্রবৃত্তির দ্বারা পরিচালিত হয় না, বরং আল্লাহর ইচ্ছাই হয়ে ওঠে তার নিজের ইচ্ছা।
তাওহিদ: ইসলামের আত্মশুদ্ধি পদ্ধতির মূল ভিত্তি
প্রখ্যাত মুফাসসির ও দার্শনিক আল্লামে সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ হুসাইন তাবাতাবায়ী (রহ.) তাঁর এক গ্রন্থে “তাওহিদী চিন্তার আলোকে আত্মশুদ্ধি” শীর্ষক অংশে ব্যাখ্যা করেছেন যে: ইসলামের আত্মশুদ্ধির বিশেষ পদ্ধতি সম্পূর্ণরূপে বিশুদ্ধ তাওহিদের ওপর নির্ভরশীল।
তিনি বলেন—যখন মানুষ নিশ্চিতভাবে উপলব্ধি করে যে:
১.আসল অস্তিত্ব শুধুই আল্লাহর,
২.সব কিছুর মালিক তিনি একমাত্র,
৩.সমস্ত সৃষ্টির ফলাফল ও নিয়ন্ত্রণও তাঁর হাতে,
৪.আর তিনিই সমগ্র বিশ্বের প্রকৃত পালনকর্তা,
তখন সে আর কাউকে—উপকারকারী বা ক্ষতিসাধনকারী, জীবনদাতা বা মৃত্যুদাতা—মনে করে না।
ইচ্ছাশক্তির রঙ বদলে যায়
এই উপলব্ধি অন্তরে দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হলে মানুষ এক বিশেষ পর্যায়ে পৌঁছায়, যেখানে—
সে আর কিছুই কামনা করে না আল্লাহ যা চান তার বাইরে;
আর সে ঘৃণাও করে কেবল সেই বিষয়, যা আল্লাহ অপছন্দ করেন।
অর্থাৎ তার ভালোবাসা ও ঘৃণাও আল্লাহর মানদণ্ডে বাঁধা পড়ে যায়—এমন অবস্থাই প্রকৃত তাওহিদপরায়ণতা (موحّد بودن)।
উপসংহার
আত্মশুদ্ধি ইসলামে কোনো ধ্যান-যোগ বা আনুষ্ঠানিক অনুশীলনের মাধ্যম নয়;
বরং এটি হৃদয় ও ইচ্ছাশক্তিকে আল্লাহর ইচ্ছার সঙ্গে একাকার করার এক আধ্যাত্মিক রূপান্তর। তাওহিদপরায়ণ সেই ব্যক্তি, যার ইচ্ছাশক্তি আল্লাহর রঙে রঞ্জিত।
সূত্র: আলী আ. এবং ফালসাফেহ এলাহী , পূষ্টা ৩৬।



