তওবা যতবারই ভাঙুক, থেমো না— আয়াতুল্লাহ খোশওয়াক্ত (রহ.)-এর উপদেশ থেকে শিক্ষা
রাসেল আহমেদ | প্রকাশ: ৪ অক্টোবর, ২০২৫

মিডিয়া মিহির: মানুষের জীবনে পাপ, ভুল এবং নফসের টান থেকে মুক্তি পাওয়া সহজ নয়। কেউ কেউ এক পাপ থেকে ফিরে আসতে চায়, কিন্তু কিছুদিন পর আবার একই ভুলে জড়িয়ে পড়ে। বারবার তওবা করে আবার ভেঙে ফেলে। তখন মনে হয় — “আমার তওবা কি আর কোনো মূল্য রাখে?”
ঠিক এমন এক প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিলেন ইসলামী নৈতিকতার প্রখ্যাত শিক্ষক, আয়াতুল্লাহ আজিজুল্লাহ খোশওয়াক্ত (রহ.), যিনি আত্মশুদ্ধি ও নফসের জিহাদ সম্পর্কে তাঁর গভীর বক্তব্যের জন্য পরিচিত ছিলেন।
প্রশ্ন ১: আমি নফসের দাস হয়ে পড়েছি। এতে আমি গভীরভাবে কষ্ট পাচ্ছি। এই কষ্ট আমাকে মানসিকভাবে দুর্বল করে ফেলছে। তওবা করার ইচ্ছা থাকলেও স্থায়ী হতে পারি না। বারবার চেষ্টা করি, আবার হেরে যাই। এখন কী করব?
উত্তর: “যদি তুমি অবিরত চেষ্টা চালিয়ে যাও, অবশেষে সফল হবে;
কিন্তু যদি হাল ছেড়ে দাও, আরও নিচে নেমে যাবে।”
আয়াতুল্লাহ খোশওয়াক্ত বলেন — “এক সপ্তাহ চেষ্টা চালাও। যদি ভুল করো, আবার শুরু করো। পরের সপ্তাহে আরও দৃঢ়ভাবে এগিয়ে যাও। এভাবেই তোমার সংকল্প ও ইচ্ছাশক্তি দৃঢ় হবে, এবং তুমি নফসের বিরুদ্ধে জয়ী হবে। কিন্তু যদি তওবা ত্যাগ করে আত্মসমর্পণ করলে তুমি ধ্বংস হয়ে যাবে।”
প্রশ্ন ২: একটি নির্দিষ্ট পাপের জন্য আমি বহুবার তওবা করেছি, কিন্তু প্রতিবারই তা ভেঙে ফেলেছি। এখন জানি যে, ভবিষ্যতেও হয়তো আবার সেই পাপে জড়িয়ে পড়ব। এমন অবস্থায় তওবা করা কি অর্থহীন?
উত্তর: “তওবা অবশ্যই করো, কারণ তওবা না করলে আরও বেশি পাপে জড়িয়ে পড়বে।”
শিক্ষণীয় দিক
আয়াতুল্লাহ খোশওয়াক্ত এই বক্তব্য আমাদের শেখায়— তওবা কেবল পাপ থেকে ফিরে আসা নয়, বরং এটি একধরনের আত্মিক সংগ্রাম (জিহাদুন নফস)। যে মানুষ বারবার পড়ে যায় কিন্তু বারবার উঠেও দাঁড়ায় — সে হেরে যায় না, বরং ধীরে ধীরে জয়ের পথে এগিয়ে যায়।
তওবা ত্যাগ করা মানে আশা হারানো, আর আশাহীনতা শয়তানের সবচেয়ে বড় অস্ত্র। কিন্তু যতক্ষণ একজন মানুষ তওবা করে, তার অন্তরে আল্লাহর দিকে ফিরে যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা বেঁচে থাকে। আর সেই আকাঙ্ক্ষাই তাকে একদিন স্থায়ীভাবে মুক্তি দেয়।
তওবা যতবারই ভাঙুক না কেন, তা কখনোই বৃথা যায় না। প্রতিটি তওবা এক একটি নতুন সূচনা। হয়তো শততম তওবাই হবে স্থায়ী মুক্তির সূর্যোদয়।



