তওবা কি সত্যিই আমাদের নিজের কাজ?
রাসেল আহমেদ | প্রকাশ: ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫
মিডিয়া মিহির: মানুষ কখনো কখনো আল্লাহর অসীম রহমতের সামনে এমন গভীর আনন্দ ও বিস্ময়ে আপ্লুত হয়ে পড়ে যে, নিজের ভেতরেই স্থির থাকতে পারে না। প্রকৃত সত্য হলো—আমরা আল্লাহর দিকে যাই না; বরং আল্লাহই তাঁর বান্দাদের খুঁজে নেন এবং সীমাহীন দয়া ও ভালোবাসা দিয়ে তাদের নিজের দিকে আহ্বান করেন।
প্রয়াত উস্তাদ ফাতেমী নিয়া তাঁর এক বক্তৃতায় “বান্দাদের প্রতি আল্লাহর রহমত” বিষয়ে গভীর তাৎপর্যপূর্ণ আলোচনা করেন, যা পাঠকদের জন্য এখানে তুলে ধরা হলো:
মানুষ কখনো কখনো আল্লাহর রহমতের গভীরতা উপলব্ধি করে বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে যায়। তখন মনে হয়— হে আল্লাহ, আমরা সত্যিই আপনার কদর বুঝতে পারি না।
মানুষ যখন তওবা করে, তখন সাধারণত মনে করে— সে নিজেই আল্লাহর দিকে ফিরে এসেছে এবং আল্লাহ দয়া করে তাকে ক্ষমা করেছেন। অথচ বাস্তবতা এর চেয়েও অনেক গভীর ও হৃদয়স্পর্শী।
প্রকৃতপক্ষে আল্লাহই আমাদের দিকে এগিয়ে আসেন। তিনি কখনোই তাঁর বান্দাদের একা ছেড়ে দেন না; বরং নিজেই তাদের খোঁজ নেন এবং ফিরে আসার পথ তৈরি করে দেন।
যদি কোনো বান্দা আল্লাহ থেকে দূরে সরে যায়, এমনকি তাঁর কাছ থেকে পালিয়ে বেড়ায়, তবুও আল্লাহ সেই পলাতক বান্দাকেই অনুসন্ধান করেন এবং দয়ার সাথে তাঁকে নিজের দিকে ডাকেন।
তিনি পাপী বান্দাদের উদ্দেশে আহ্বান পাঠান এবং বলেন—
يَا عِبَادِيَ الَّذِينَ أَسْرَفُوا عَلَىٰ أَنفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوا مِن رَّحْمَةِ اللَّهِ
অর্থাৎ: “হে আমার বান্দারা, যারা নিজেদের ওপর জুলুম করেছ, আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না।”
এই সম্বোধন আল্লাহর রহমতের চূড়ান্ত প্রকাশ। বান্দা যখন পাপে নিমজ্জিত থাকে, তখনও আল্লাহ তাকে স্নেহভরা ভাষায় বলেন— “হে আমার বান্দারা”।
এই রহমত বোঝানোর জন্য একটি হৃদয়গ্রাহী উদাহরণ দেওয়া যায়। ধরুন, এক ছেলে কোনো ভুল করেছে এবং বাবার কাছে গভীরভাবে লজ্জিত। লজ্জা বা ভয়ের কারণে সে দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে থাকে; ভেতরে ঢোকার সাহস পায় না। এখন যদি বাবা রুক্ষভাবে বলেন—“যাও, তাকে বলো এসে খাবার খেয়ে যাক, তবে যেন আর এমন কাজ না করে”—এটি হবে এক সাধারণ বাবার আচরণ, যেখানে রাগ ও অভিমান প্রকাশ পায়। কিন্তু আল্লাহ তো ‘আরহামার রাহিমিন’— সবচেয়ে দয়ালু ও সবচেয়ে করুণাময়।
আল্লাহ আমাদের হৃদয়ের কাছে দূত পাঠান, কিন্তু কঠোরতা বা ভীতির মাধ্যমে নয়; বরং ভালোবাসা ও করুণার আহ্বানে।
গোটা আহ্বান যেন এমন— “এসো, হে আমার বান্দা, দরজা খোলা। আমি দয়ালু রব, আমি ‘আরহামার রাহিমিন’ , আমি আকরামুল আকরামীন। আমি নিজেই তোমাকে ক্ষমা করি। আমি নিজেই তোমার দিকে এসেছি—এমনকি তুমি যদি আমার কাছ থেকে পালিয়েও থাকো।”
আমরা মনে করি— আমরাই তওবা করেছি; অথচ বাস্তবে আমাদের তওবা আল্লাহর পক্ষ থেকে ফিরে আসার এক করুণাময় আমন্ত্রণ ছাড়া আর কিছুই নয়। তিনি নিজেই আমাদের হাত ধরে নেন, আমাদের তাঁর দরবারে টেনে আনেন এবং অসীম দয়ায় বলেন— “আমি তোমাকে ক্ষমা করলাম; কারণ আমি ক্ষমাশীল।”
সুতরাং তওবা কেবল মানুষের প্রচেষ্টার ফল নয়; বরং তা আল্লাহর অনুগ্রহ, আহ্বান ও ভালোবাসারই প্রকাশ। বান্দা যখন ফিরে আসে, তখন সে উপলব্ধি করে—এই ফেরার পথটি সে নিজে তৈরি করেনি; বরং আল্লাহ নিজেই তার জন্য দরজা খুলে রেখেছিলেন। এই উপলব্ধিই মানুষের হৃদয়ে আশা, ভরসা ও আল্লাহর প্রতি গভীর ভালোবাসা সৃষ্টি করে।



