ধর্ম ও বিশ্বাসকুরআনবিশেষ সংবাদ
চাপ ও উদ্বেগ দূর করতে ইসলামি ও কোরআনীয় প্রজ্ঞা
রাসেল আহমেদ | প্রকাশ: ৪ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২৫

মিডিয়া মিহির: বর্তমান দ্রুতগতি জীবনে উদ্বেগ, মানসিক চাপ ও স্ট্রেস আমাদেরকে প্রায়ই নিঃসন্তান ও হতাশ করে তোলে। হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন নাসের রাফিয়ি তার বক্তৃতায় পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ কোরআনীয় ও ইসলামিক পরামর্শ দিয়েছেন, যা দৈনন্দিন জীবনে মানসিক শান্তি ও আধ্যাত্মিক স্থিতিশীলতা অর্জনে সহায়ক।
১. সবসময় ওযু অবস্থায় থাকা: কেন? ওযু কেবল নামাজের প্রস্তুতি নয়; এটি হৃদয় ও আত্মাকে প্রশান্তি দেয় এবং আল্লাহর প্রতি সংযোগকে শক্তিশালী করে।
কিভাবে প্রয়োগ করবেন: দৈনন্দিন কাজের আগে, ঘুম থেকে ওঠার সময়, এবং বিশেষ পরিস্থিতিতে (যেমন উদ্বেগ, কাজের চাপ বা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে) ওযু করুন। এতে আপনার মনকে শান্ত রাখা এবং দৈনন্দিন চাপ মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত থাকা সহজ হয়।
২. দোয়া ও মোনাজাত দ্বারা সুরক্ষা: কেন? হাতের স্পর্শ ও সূরা পাঠ আমাদের ও পরিবারকে বিপদ, রোগ ও নেতিবাচক শক্তি থেকে রক্ষা করে।
কিভাবে প্রয়োগ করবেন: প্রতিদিন নিজের, সন্তান এবং পরিবারের অন্য সদস্যদের মাথায় হাত রাখুন। সুরা “قل أعوذ برب الناس” ও “قل أعوذ برب الفلق” তেলাওয়াত করুন। এই প্রথা রাসূলুল্লাহ (স.)–এর সময়েই ছিল; তিনি হযরত ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইন (আ.)–এর জন্য ব্যবহার করতেন।
৩. ধারাবাহিক সদকাহ দেওয়া: কেন? সদকাহ মানসিক প্রশান্তি ও আল্লাহর নৈকট্য বৃদ্ধির অন্যতম পথ। এটি বিপদ ও অসুবিধা কমায় এবং আত্মিক স্থিতিশীলতা জাগায়।
কিভাবে প্রয়োগ করবেন: প্রতিদিন একটি ছোট অর্থের সদকাহ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য প্রদান করুন। দরিদ্র ও অসহায়দের হাতে তা পৌঁছে দিন। সন্তানদেরও এতে যুক্ত করুন, যাতে তারা ছোট থেকেই দাতব্য চেতনা অর্জন করে।
৪. প্রতিদিন সুরা “হাশর” পাঠ : কেন? সুরা হিশর আমাদের মনে স্থিতি ও নিরাপত্তার অনুভূতি দেয়। এটি উদ্বেগ, মানসিক অস্থিরতা ও রোগ প্রতিরোধে সহায়ক।
কিভাবে প্রয়োগ করবেন: প্রতিদিন রাতে বা যে সময় আপনার মন শান্ত থাকে, এই সূরা পাঠ করুন। মনোযোগ সহকারে অর্থ অনুধাবন করার চেষ্টা করুন। এটি আপনার আত্মিক শক্তি ও ঈমানকে আরও মজবুত করবে।
৫. আল্লাহর প্রতি পূর্ণ ভরসা ও ধৈর্য: কেন? জীবনের অপ্রত্যাশিত সমস্যার মুখোমুখি হলে আল্লাহর প্রতি ভরসা আমাদের নিরাপত্তা, আত্মবিশ্বাস ও স্থিতিশীলতা দেয়।
কিভাবে প্রয়োগ করবেন: নিয়মিত “حسبنا الله و نعم الوکیل” উচ্চারণ করুন। সুরা তওবার শেষ আয়াত পড়ুন: “حَسبِی اللهَ لا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، عَلَیهِ تَوَکَّلْتُ وَهُوَ رَبُّ العَرْشِ العَظِیم”
মনে রাখুন, সবকিছু আল্লাহর হাতে এবং আমরা তার দিকে ফিরে যাবো: “إنا لله وإنا إلیه راجعون”।
ব্যবহারিক পরামর্শ ও উপসংহার: প্রতিদিন অল্প সময় নিয়ে ওযু, দোয়া ও সূরা পাঠ করুন। পরিবারের সঙ্গে এই প্রথা ভাগ করুন, যাতে সবাই মানসিক শান্তি ও আধ্যাত্মিক শক্তি পায়। সদকাহ ছোট হলেও নিয়মিত দিলে আত্মিক স্থিতি বাড়ে। চাপ ও উদ্বেগের মুহূর্তে আল্লাহর নাম স্মরণ করুন; এটি আপনাকে স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তার অনুভূতি প্রদান করবে। মনে রাখুন, জীবন নাশ্বর: “کل من علیها فان”। তাই আল্লাহর উপর ভরসা এবং নিয়মিত ইবাদত আমাদের উদ্বেগ ও স্ট্রেস থেকে মুক্ত রাখে।
এই পাঁচটি কোরআনীয় ও ইসলামী পরামর্শ নিয়মিত প্রয়োগ করলে, আপনি শুধু মানসিক শান্তি অর্জন করবেন না, বরং জীবনের প্রতিটি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি আরও দৃঢ়ভাবে দাঁড়াতে পারবেন।