বিশ্বকুরআনকুরআন শিক্ষাজীবনযাপনতাফসীরধর্ম ও বিশ্বাসবিশেষ সংবাদসংবাদ বিশ্লেষণ

গর্ভপাত: আধুনিক যুগের সন্তানহত্যা ও অজ্ঞতার প্রতিফলন

ডক্টর মুহাম্মাদ ফারুক হুসাইন। প্রকাশ: ১১ অক্টোবর ২০২৫

মিডিয়া মিহির: পুরাতন যুগের অজ্ঞতার মতোই, যেখানে মানুষ দারিদ্র্যের ভয় থেকে মেয়েদের জীবন্ত দাফন করত, আজও গর্ভপাতের প্রথা চালু রয়েছে—তবে এখন আধুনিক ছাপ ধরে। বিশেষ করে জীবিকা সংকট বা ছেলে সন্তানের আকাঙ্ক্ষার কারণে শিশুর গর্ভপাত, মূলত সেই পুরনো অজ্ঞতাবোধের আধুনিক রূপ। ইসলামের দৃষ্টিতে এটি সম্পূর্ণরূপে অগ্রহণযোগ্য।

ইসলামিক দৃষ্টিভঙ্গি ও কোরআনের নির্দেশ

হাওজা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাসুমা কেশ্তকার বলেন, “ভবিষ্যতের জন্য মেয়েদের প্রতি উদ্বেগ বা দারিদ্র্যের ভয় আল্লাহর প্রতিশ্রুতিপ্রতি বিশ্বাসের বিরুদ্ধে।”

তিনি কোরআনের এই আয়াত উল্লেখ করেছেন:

وَ لاَ تَقْتُلُواْ أَوْلادَکمْ خَشْیةَ إِمْلاقٍ نَّحْنُ نَرزُقُهُمْ وَ إِیاکم

তোমরা তোমাদের সন্তানদের দারিদ্র্যের ভয় থেকে হত্যা করো না; আমরা তাদের এবং তোমাদের জন্য রুজি প্রভৃত করি।ইসরা, আয়াত ৩১।

কেশ্তকার বলেন, “এই আয়াত দেখায় যে সামাজিক এবং মানসিক পাপের মূল কারণ হলো আল্লাহর প্রতিশ্রুতিপ্রতি অবিশ্বাস।”

তিনি আরও বলেন, আল্লাহ মেয়েরা বা ছেলে—কারও জন্য রুজি নির্ধারণে পার্থক্য করেন না। তাই মেয়েদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ এবং ধারণা যে তারা ছেলে সন্তানদের মতো রুজি উপার্জনে সক্ষম নয়, তা মূলত জাহিলি সংস্কৃতির অবশিষ্ট, ইসলাম নয়। কোরআনে বলা হয়েছে:

اللَّهُ یَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَن یَشاءُ وَ یَقْدِرُ

 (রাআদ, ২৬)
আল্লাহ যাকে ইচ্ছা, তার জন্য রুজি বিস্তৃত করেন বা সীমিত করেন।

অর্থাৎ লিঙ্গের কারণে রুজির কোন প্রভাব নেই।

গর্ভপাত ও আধুনিক অজ্ঞতা

কেশ্তকার উল্লেখ করেন, “জাহিলি যুগে মানুষ দারিদ্র্যের ভয় থেকে মেয়েদের জীবন্ত দাফন করত; আজও সেসব প্রথা চলছে—তবে এখন গর্ভপাতের আড়ালে। মানুষ আজও জীবিকা সংকট বা ছেলে সন্তানের আকাঙ্ক্ষার নামেই এই কাজ চালাচ্ছে, যা মূলত আধুনিক যুগের জাহিলি সংস্কৃতি।

ভালোবাসা, উদ্বেগ এবং ঈমান

তিনি বলেন, “পিতামাতার উদ্বেগ মূলত আল্লাহর নৈকট্যের একটি প্রকাশ। আল্লাহ হৃদয়ে প্রেম ও দয়া রেখেছেন যাতে তারা সন্তানের যত্ন নিতে পারেন। তবে যখন উদ্বেগ অবিশ্বাস ও উৎকণ্ঠায় পরিণত হয়, তখন তা তাওক্কুলের বিপরীত।”

সত্যিকারের ঈমান তখনই অর্জিত হয়, যখন মানুষ নিজের ও সন্তানের রুজি আল্লাহর অশেষ উৎস থেকে আশা করে।

রাসূল (সা.) ও ইমামদের দিকনির্দেশনা

রাসূলুল্লাহ (সা.) বহুবার উক্ত করেছেন, যারা মেয়ের বাবা-মা, তাদের প্রতি আল্লাহ সাহায্য ও মঙ্গল বর্ষণ করেন। হাদিসে বলা হয়েছে:

১.যার একটি মেয়ে আছে, আল্লাহ তাকে সাহায্য ও সহায়তা করবেন, এবং তার প্রতি দয়া ও ক্ষমা বর্ষণ করবেন।

২.যে ঘরে মেয়ে থাকে, প্রতি দিন বারোটি আল্লাহর বরকত নেমে আসে এবং ফেরেশতারা সেই ঘরকে পরিদর্শন করে।

ইমাম সাদিক (আ.) বলেছেন:

যখন একটি মেয়ে জন্মায়, একটি ফেরেশতা আসে, তার মাথার উপর ডানা বিস্তৃত করে বলে—‘এই সুন্দর সৃষ্টি আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে, যে কেউ তার জন্য খরচ করবে, আল্লাহ তাকে কিয়ামতের দিন পর্যন্ত সাহায্য করবেন।

উপসংহার

কেশ্তকার বলেন, “একটি বিশ্বাসী সমাজ হলো এমন সমাজ যেখানে—

১. কোনো মা মেয়েকে পেয়ে লজ্জিত নয়,

২. কোনো বাবা মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন নয়,

৩. আর কোনো মানুষ আল্লাহর রুজি নিয়ে সন্দেহ করে না।

কারণ আমরা সকলেই একই আল্লাহর রুজিখোর।

আরও পড়ুন

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button