খাবারে অতিরিক্ত লবণ কি মানসিক স্বাস্থ্যের ঝুঁকি বাড়ায়?
ডক্টর মুহাম্মাদ ফারুক হুসাইন। প্রকাশ: ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫
মিডিয়া মিহির: খাদ্যাভ্যাস শুধু শরীরের স্বাস্থ্যের ওপর নয়, মানুষের মানসিক অবস্থার ওপরও গভীর প্রভাব ফেলে। সাম্প্রতিক এক বৈজ্ঞানিক গবেষণায় ইঙ্গিত পাওয়া গেছে যে অতিরিক্ত লবণসমৃদ্ধ খাদ্যাভ্যাস বিষণ্নতার লক্ষণ বাড়িয়ে দিতে পারে। যদিও গবেষণাটি ইঁদুরের ওপর পরিচালিত, তবু এর ফলাফল মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে নতুন করে ভাবনার দরজা খুলে দিয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)–এর হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে প্রায় ৫ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ বিষণ্নতায় ভুগছেন।
এই বাস্তবতায় বিশেষজ্ঞরা কার্যকর চিকিৎসা ও প্রতিরোধমূলক উপায় খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন। গবেষণার একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে মানুষের খাদ্যাভ্যাস। বিদ্যমান প্রমাণগুলো ইঙ্গিত দেয় যে স্বাস্থ্যকর খাদ্য অনুসরণ এবং ফাস্টফুডের মতো ক্ষতিকর খাবার এড়িয়ে চলা বিষণ্নতার ঝুঁকি কমাতে সহায়ক হতে পারে।
সম্প্রতি The Journal of Immunology–তে প্রকাশিত এক গবেষণায় ইঁদুরের ওপর অতিরিক্ত লবণসমৃদ্ধ খাদ্যাভ্যাস ও বিষণ্নতার লক্ষণের মধ্যকার সম্পর্ক বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
গবেষণার ফলাফল দেখায়, যেসব ইঁদুর দীর্ঘ সময় ধরে বেশি লবণযুক্ত খাদ্য গ্রহণ করেছে, তাদের মধ্যে বিষণ্নতার মতো আচরণগত লক্ষণ দেখা গেছে। এই পর্যবেক্ষণ বিষণ্নতা ও তার সম্ভাব্য চিকিৎসা নিয়ে ভবিষ্যৎ গবেষণার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
গবেষকরা প্রথমে যাচাই করেন—অতিরিক্ত লবণযুক্ত খাদ্য গ্রহণকারী ইঁদুররা আদৌ বিষণ্নতার লক্ষণ প্রকাশ করে কি না।
এ উদ্দেশ্যে ইঁদুরদের ৫ থেকে ৮ সপ্তাহ ধরে দুই ধরনের খাদ্য দেওয়া হয়—একদলকে স্বাভাবিক খাদ্য এবং অন্যদলকে লবণসমৃদ্ধ খাদ্য। ইঁদুরদের আচরণ বিশ্লেষণের জন্য একাধিক পরীক্ষামূলক পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। পাশাপাশি গবেষণায় এমন একটি নিয়ন্ত্রণ দলও ছিল, যাদের মধ্যে আগে থেকেই বিষণ্নতাসদৃশ আচরণ বিদ্যমান ছিল।
ফলাফল থেকে দেখা যায়, যেসব ইঁদুর অতিরিক্ত লবণযুক্ত খাদ্য গ্রহণ করেছে, তাদের আচরণ নিয়ন্ত্রণ দলের ইঁদুরদের সঙ্গে বিস্ময়করভাবে মিল রয়েছে। এটি স্পষ্ট করে যে বেশি লবণযুক্ত খাদ্য ইঁদুরের মধ্যে বিষণ্নতাসদৃশ আচরণ সৃষ্টি করতে পারে।
গবেষকরা আরও লক্ষ্য করেন যে এসব ইঁদুরের শরীরে IL-17A নামের একটি সাইটোকাইনের উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে গেছে—যা বিষণ্নতার লক্ষণের সঙ্গে সম্পর্কিত বলে পরিচিত।
বিশ্লেষণে দেখা যায়, কিছু নির্দিষ্ট কোষ এই সাইটোকাইনটি বেশি মাত্রায় উৎপাদন করেছে এবং ইঁদুরের প্লীহা ও মস্তিষ্কে এর উচ্চ মাত্রা পাওয়া গেছে। এটি ইঙ্গিত করে যে অতিরিক্ত লবণযুক্ত খাদ্যাভ্যাস এই সাইটোকাইনের উৎপাদনকে উদ্দীপিত করে।
তবে গবেষকরা জোর দিয়ে বলেছেন, এই ফলাফল মানুষের ক্ষেত্রেও একই রকম হবে কি না এবং এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব কী হতে পারে—তা জানতে আরও বিস্তৃত গবেষণা প্রয়োজন।
Medical News Today–এর এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, অতিরিক্ত লবণ বা সোডিয়াম গ্রহণ উচ্চ রক্তচাপ, পাকস্থলীর ক্যানসার, অস্টিওপোরোসিস এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
পুষ্টিবিদ কারেন জেড বার্গ Medical News Today–কে জানান, অতিরিক্ত সোডিয়াম গ্রহণ হৃদযন্ত্র ও কিডনির জন্য বিশেষভাবে ক্ষতিকর। যাদের হৃদরোগ, কিডনি রোগ, ডায়াবেটিস বা ফ্যাটি লিভারের সমস্যা রয়েছে, তাদের সোডিয়াম গ্রহণের মাত্রা অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ করা উচিত, যাতে রোগের অবনতি না ঘটে।
খাদ্যাভ্যাস–সংক্রান্ত নির্দেশিকা অনুযায়ী, সুস্থ প্রাপ্তবয়স্কদের দৈনিক সোডিয়াম গ্রহণ ২,৩০০ মিলিগ্রাম–এর মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা উচিত। সংখ্যাটি বড় মনে হলেও এটি আসলে মাত্র এক চা-চামচ লবণের সমান।
এছাড়া, খাবার কেনার সময় পণ্যের লেবেল ভালোভাবে পড়ে দেখা জরুরি—সেখানে কতটুকু সোডিয়াম রয়েছে, তা জানা থাকলে অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ এড়ানো সম্ভব।



