কোরআনে আল্লাহর সম্বোধনে কেন ‘هو’ ব্যবহার করা হয়েছে?
ডক্টর মুহাম্মাদ ফারুক হুসাইন। প্রকাশ: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
মিডিয়া মিহির:কোরআনে আল্লাহকে ‘هو’ সর্বনাম দ্বারা সম্বোধন করার বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গনে আলোচনা হয়ে আসছে। প্রশ্ন ওঠে, যদি আল্লাহ পুরুষ বা নারী না হন, তবে কেন বাণীগ্রন্থে পুরুষ সর্বনাম ব্যবহৃত হয়? এই বিষয়টি মূলত ভাষাগত ও সাহিত্যিক নিয়মের ফল, লিঙ্গ বৈষম্যের প্রতিফলন নয়।
কেন ‘هو’, না ‘هي’?
আরবি ভাষায় শব্দ ও সর্বনাম দুই ভাগে বিভক্ত—পুরুষ ও নারী। তবে এটি সবসময় বাস্তব লিঙ্গ নির্দেশ করে না।
১.বাস্তব লিঙ্গ: মানুষ বা প্রাণীর জন্য।
২.কাল্পনিক/সাংকেতিক লিঙ্গ: বস্ত্র, ধারণা বা শব্দের জন্য, যা বাস্তব লিঙ্গ বহন করে না। উদাহরণস্বরূপ, ‘شمس’ (সূর্য) নারী, ‘قمر’ (চাঁদ) পুরুষ সর্বনাম।
‘الله’, ‘ربّ’, ‘خالق’, ‘رحمن’—এসব শব্দ আরবি ব্যাকরণে কাল্পনিক পুরুষ লিঙ্গে পড়ে। সুতরাং, আল্লাহর জন্য ‘هو’ ব্যবহার করা শুধু ব্যাকরণিক যুক্তি, যা আল্লাহকে পুরুষ হিসেবে চিহ্নিত করে না।
কোরআনের ভাষাভঙ্গি ও মানুষের অনুধাবনক্ষমতা
কোরআন মানুষের ভাষায় অবতীর্ণ হয়েছে—“لسان قوم”—যাতে সাধারণ মানুষ সহজে বুঝতে পারে। আল্লাহ বলেন:
«لَیْسَ کَمِثْلِهِ شَیْءٌ»
“তার কোনো অনুরূপ নেই।” (শূরা, ১১)
অর্থাৎ আল্লাহ সৃষ্টির সঙ্গে অনুরূপ নয়, তিনি ন্যায়, শক্তি ও মহিমায় পূর্ণ, কিন্তু কোনো লিঙ্গ নেই।
লিঙ্গগত সংজ্ঞা ও দ্ব্যর্থহীনতার পরিচয়
যদি নারী সর্বনাম ব্যবহৃত হত, প্রশ্নটি আবারও উঠত—কেন নারী? অন্য কোনো সর্বনামও তাতেও একইভাবে প্রশ্নের জন্ম দিত। এই বিতর্ক মূলত ভাষাগত বিশ্লেষণের ভুল।
আল্লাহর গুণাবলি: জালাল ও জামাল
কোরআনে আল্লাহ কেবল জালাল (শক্তি, কর্তৃত্ব) দ্বারা নয়, জামাল (দয়া, মেহেরবানী, ক্ষমাশীলতা) দ্বারাও পূর্ণ। সর্বনাম বা গুণাবলির ওপর ভিত্তি করে আল্লাহকে পুরুষ বা নারী হিসেবে বিচার করলে কোরআনের একত্ববাদী দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিচ্যুত হওয়া হয়।
উপসংহার
কোরআনে আল্লাহর জন্য ‘هو’ ব্যবহারের অর্থ শুধু ভাষাগত ও সাহিত্যিক প্রয়োজন। এটি কোনো লিঙ্গপছন্দ বা নারী অবমূল্যায়নের প্রতীক নয়। আল্লাহর কোনো লিঙ্গ নেই এবং আরবি ভাষায় ‘هو’ হল সেই একমাত্র সর্বনাম যা এমন অস্তিত্বের জন্য সঠিকভাবে প্রয়োগ করা যায়।



