কোরআনের চিরন্তন দৃষ্টিকোণ থেকে পার্থিব জগতের সৌন্দর্য ও আকর্ষণ
ডক্টর মুহাম্মাদ ফারুক হুসাইন। প্রকাশ: ৬ অক্টোবর ২০২৫
মিডিয়া মিহির: পৃথিবীর অস্থায়ী আবেশ ও মায়া আমাদের হৃদয়কে প্রায়শই বিভ্রান্ত করে। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে বারবার স্মরণ করিয়ে দেন যে, এই দুনিয়ার সমস্ত সৌন্দর্য ও সম্পদ কেবল অস্থায়ী; শুধুমাত্র তাকওয়া, সদকর্ম ও আল্লাহর প্রতি গভীর ভালোবাসাই চিরন্তন। মৃত্যুর মুহূর্তে যখন সব মায়া অদৃশ্য হয়ে যায়, তখনই আমরা বুঝি—যে জিনিসগুলোকে আমরা সত্যি মনে করেছি, তা সবই ছিল একটি মায়া। এই অনুধাবন হৃদয়কে আল্লাহর রঙ ও সুগন্ধে রাঙাতে পারে, আর তখনই সে মায়া নয়, চিরন্তন সত্যে পরিণত হয়।
আল্লাহ তাআলা কোরআনে বলেছেন:
فَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرَی عَلَی اللَّهِ کَذِبًا أَوْ کَذَّبَ بِآیَاتِهِ أُولَئِکَ یَنَالُهُمْ نَصِیبُهُمْ مِنَ الْکِتَابِ حَتَّی إِذَا جَاءَتْهُمْ رُسُلُنَا یَتَوَفَّوْنَهُمْ قَالُوا أَیْنَ مَا کُنْتُمْ تَدْعُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ قَالُوا ضَلُّوا عَنَّا وَشَهِدُوا عَلَی أَنْفُسِهِمْ أَنَّهُمْ کَانُوا کَافِرِینَ
তাদের চেয়ে অধিক অন্যায়কারী কে হতে পারে যারা আল্লাহর বিরুদ্ধে মিথ্যা আবিষ্কার করে বা তাঁর নিদর্শনসমূহকে অস্বীকার করে? তারা (বিশ্বের) ভাগ্য অনুযায়ী তাদের অংশ ভোগ করে, যতক্ষণ না আমাদের দূতরা (মৃত্যু পরিশ্রমের ফেরেশতারা) তাদের কাছে আসে। তখন তারা জিজ্ঞেস করে: ‘তোমরা যাদেরকে আল্লাহ ছাড়া ডাকছিলে, তারা কোথায়?’ তারা বলে: ‘তারা আমাদের থেকে হারিয়ে গেছে।’ এবং তারা নিজেদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেয় যে তারা কাফের ছিলেন।সুরা আল-আ‘রাফ/ ৩৭)
এই আয়াতে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বার্তা রয়েছে। হৃদয়ে পূর্ণ বিশ্বাস অর্জন করলে মানুষের সমস্ত পছন্দ, আকাঙ্ক্ষা, রুচি এবং জীবনযাত্রা আল্লাহর ইচ্ছার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হতে পারে।
মৃত্যুর সময়, আমরা যে সমস্ত জিনিসকে পৃথিবীতে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেছি—যেগুলো আল্লাহ ছাড়া আমাদের আবেগের কেন্দ্র ছিল—তার কোনো মূল্য থাকবে না। সেগুলো অদৃশ্য হয়ে যাবে, যেন কখনও ছিলই না। সেই সময় আমরা বুঝব যে, আমরা কতোটা ভুলে সেই মায়ার পিছনে ছুটেছি।
অন্য একটি আয়াতে আল্লাহ তাআলা পৃথিবীর অস্থায়ী আবেশকে এভাবে প্রকাশ করেছেন:
وَإِنَّا لَجَاعِلُونَ مَا عَلَیْهَا صَعِیدًا جُرُزًا
কিন্তু এই আড়ম্বর স্থায়ী নয়। আমরা একদিন পৃথিবীর উপরবর্তী স্তরকে উদ্ভিদবিহীন মাটি বানাব। সুরা আল-কাহাফ/ ৮
এই আয়াত সতর্কবার্তা দেয় তাদের জন্য যারা পৃথিবীর জিনিসপত্র ও সৌন্দর্যের প্রতি আবদ্ধ। সবকিছু একদিন মাটির সঙ্গে সমান হয়ে যাবে।
তবে মানুষের প্রকৃত সৌন্দর্য—যা হলো তাকওয়া (ভয়-ভীতি ও সততা) এবং সদকর্ম—কখনও বিনষ্ট হবে না। যা বিনষ্ট হবে, তা হলো পৃথিবীর সৌন্দর্য। আল্লাহ বলেছেন:
إِنَّا جَعَلْنَا مَا عَلَی الْأَرْضِ زِینَةً لَهَا.
আমরা যা পৃথিবীর উপর আছে, তা পৃথিবীর সৌন্দর্য হিসেবে সৃষ্টি করেছি। সুরা আল-খাফ/ ৭
প্রশ্ন আসে, এই সৌন্দর্যগুলো মানুষের কাজে আসে কীভাবে? কোরআন সাথে সাথে উত্তর দিয়েছে:
لِنَبْلُوَهُمْ أَیُّهُمْ أَحْسَنُ عَمَلًا
যাতে আমরা তাদের পরীক্ষা করি, কে সবচেয়ে উত্তম কর্ম করে।
অতএব, আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করা প্রয়োজন। আমাদের পৃথিবীর সমস্ত সম্পদ কেবল পৃথিবীর সৌন্দর্য, আমাদের নয়। সত্যিকারের সৌন্দর্য হলো যে সমস্ত কিছুতে আল্লাহর রঙ ও আভা বিদ্যমান। যদি তা না হয়, একদিন সমস্ত আবেশ আমাদের কাছে মায়ার মতো অমূল্য হয়ে যাবে।
সূ্ত্র:হাওজা, সাংস্কৃতিক বিভাগ থেকে প্রস্তুত।



