কেন নবীজির (সা.) স্ত্রীগণ আয়াতে তাতহীরের অন্তর্ভুক্ত নন?
ডক্টর মুহাম্মাদ ফারুক হুসাইন। প্রকাশ: ৮ অক্টোবর ২০২৫
মিডিয়া মিহির:আয়াতে তাতহীর(আহলে বাইতকে পবিত্র করার আয়াত) নিয়ে ইতিহাস জুড়ে অনেক বিতর্ক দেখা গেছে। কেউ কেউ মনে করেন নবীজির স্ত্রীগণও এ আয়াতের অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু আয়াতের ভাষা, ضمير (সর্বনাম)-এর ব্যবহার এবং রাসূলুল্লাহ (সা.) থেকে আসা অসংখ্য হাদিস প্রমাণ করে যে, এ অংশটি স্ত্রীদের উদ্দেশ্যে নয় বরং রাসূলুল্লাহ(সা.), আলী, ফাতিমা, হাসান ও হুসাইন (আলাই হুমুসসালাম (আলাইহিমুস সালাম)কে কেন্দ্র করেই নাজিল হয়েছে।
মূল আলোচনা
যদিও আয়াতে তাতহীর «آیه تطهیر» নবী করিমের (সা.) স্ত্রীদের সম্পর্কিত আয়াতসমূহের মাঝে এসেছে, তবুও এর শৈলী সম্পূর্ণ আলাদা এবং ভিন্ন উদ্দেশ্যকে নির্দেশ করছে।
কারণ, এর আগের ও পরের আয়াতসমূহে সবকটি যমীর ضمير (সর্বনাম) জমা মুয়ান্নাস جمع مؤنث আকারে এসেছে; অথচ আলোচ্য অংশটিতে ব্যবহার হয়েছে জমা মুকাস্সার جمع مذكر।
প্রথমে স্ত্রীদের উদ্দেশ্যে বলা হচ্ছে—
وَ قَرْنَ فى بُيُوتِكُنَّ وَ لاتَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الجاهِليَّةِ الاوُلى وَ اَقِمْنَ الصَّلوةَ و آتينَ الزَّكاةَ وَ اَطِعْنَ اللهَ وَ رَسُولَهُ
অর্থ: তোমরা নিজেদের ঘরে অবস্থান করো এবং প্রথম জাহেলিয়াতের মতো প্রকাশ্যে বের হয়ো না। নামাজ কায়েম করো, যাকাত আদায় করো এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করো।
এখানে ছয়টি যমীর ضمير ব্যবহৃত হয়েছে, এবং সবকটিই স্ত্রীলিঙ্গ বহুবচন জমা মুয়ান্নাস (جمع مؤنث)।
কিন্তু হঠাৎ করেই আয়াতের ভঙ্গি বদলে যায়—
«اِنَّما يُريدُ اللهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّجْسَ اَهْلَ الْبَيْتِ وَ يُطَهِرَّكُمْ تَطْهيراً»
অর্থ: নিশ্চয়ই আল্লাহ চান তোমাদের থেকে, হে আহলুল বায়ত, সমস্ত অপবিত্রতা দূর করে দিতে এবং তোমাদেরকে পূর্ণরূপে পবিত্র করে দিতে। এখানে জমা যমীর মুজাক্কার ضمير جمع مذكر রূপে এসেছে। ভাষাগত এই পরিবর্তনই স্পষ্ট প্রমাণ যে আয়াতটি নবীর স্ত্রীদের উদ্দেশ্যে নয়।
হাদিসের সাক্ষ্য
শুধু ভাষাগত প্রমাণই নয়, বরং অসংখ্য হাদিসও এই বাস্তবতা স্পষ্ট করেছে। সুন্নি ও শিয়া উভয় আলেমদের সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য গ্রন্থগুলোতে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর কাছ থেকে বর্ণিত আছে যে, এই আয়াতের প্রকৃত উপস্থিত(مخاطب (ছিলেন—
১. রাসূলুল্লাহ (সা.)
২. ইমাম আলী (আ.)
৩. ফাতিমা যাহরা (সা.আ.)
৪. ইমাম হাসান (আ.)
৫.ইমাম হুসাইন (আ.)
এটিই হল আসল “আহলে বাইত” যাদের সম্পর্কে আল্লাহর পবিত্রতার ঘোষণা এসেছে।
উপসংহার
আয়াতে তাতহীর «تطهیر»-এর প্রকৃত ব্যাখ্যা স্পষ্ট। যদিও এটি নবীজির স্ত্রীদের সম্পর্কিত আয়াতসমূহের মাঝে এসেছে, ভাষাগত প্রমাণ যমীরের (ضمير পরিবর্তন) এবং রাসূলুল্লাহ (সা.) থেকে আসা হাদিসসমূহ প্রমাণ করে যে, এর লক্ষ্য ভিন্ন। এই আয়াত স্ত্রীদের উদ্দেশ্যে নয় বরং রাসূল (সা.)আলী, ফাতিমা, হাসান ও হুসাইন আলাইহিমুস সালাম -কে কেন্দ্র করেই নাজিল হয়েছে। এ কারণে ইসলামি ঐতিহ্যে এই আয়াতকে “آیه تطهیر” তাতহীর বলা হয় এবং এটি আহলে বাইতের বিশেষ মর্যাদা ও পবিত্রতার চিরন্তন প্রমাণ হিসেবে বিবেচিত।



