Sliderকুরআনধর্ম ও বিশ্বাসবিশেষ সংবাদ

কেন আল্লাহ অধিকাংশ মানুষকে পথভ্রষ্ট বলেছেন?

সঠিক ইসলাম

কেন আল্লাহ অধিকাংশ মানুষকে পথভ্রষ্ট বলেছেন?

পবিত্র কুরআনের সূরা আনআমের ১১৬ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন:

وَ اِنۡ تُطِعۡ اَكۡثَرَ مَنۡ فِی الۡاَرۡضِ یُضِلُّوۡكَ عَنۡ سَبِیۡلِ اللّٰهِ ؕ اِنۡ یَّتَّبِعُوۡنَ اِلَّا الظَّنَّ وَ اِنۡ هُمۡ اِلَّا یَخۡرُصُوۡنَ

অর্থ: “আর যদি তুমি পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষের অনুসরণ কর, তাহলে তারা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করে দেবে। তারা তো কেবল অনুমানের অনুসরণ করে এবং তারা মিথ্যা উদ্ভাবন ছাড়া কিছুই করে না।”

১. অধিকাংশ মানুষের পথভ্রষ্টতার কারণ

এই আয়াতে আল্লাহ স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করেছেন যে, বেশিরভাগ মানুষ অনুমান (ধারণা), অজ্ঞতা ও কুসংস্কার দ্বারা পরিচালিত হয়। তারা বুদ্ধিবৃত্তি, যুক্তি বা ঐশী হিদায়াত এর পরিবর্তে অন্ধ অনুকরণ (তাকলিদ) এবং প্রবৃত্তির অনুসরণ করে। যেমন: তারা সত্যকে না জেনে, শুধুমাত্র পূর্বপুরুষদের রীতিনীতি বা সামাজিক মতামতকে সত্য মনে করে (সূরা আল-বাকারা ১৭০)।

তারা আল্লাহর নির্দেশিত পথ (সিরাতুল মুস্তাকীম) ছেড়ে নিজেদের খেয়ালখুশি বা দুনিয়াবী কামনা অনুযায়ী চলতে পছন্দ করে।

২. ইচ্ছাধীন পরীক্ষার নীতি

আল্লাহ তাআলা মানুষকে স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি  দিয়েছেন। সূরা আল-কাহফ (১৮:২৯) এ বলা হয়েছে:

“فَمَن شَآءَ فَلْيُؤْمِن وَمَن شَآءَ فَلْيَكْفُرْ”

“যে ইচ্ছা করে, সে ঈমান আনুক; আর যে ইচ্ছা করে, সে কুফরি করুক।” অধিকাংশ মানুষ এই স্বাধীনতাকে অপব্যবহার করে পথভ্রষ্ট হয়, কারণ তারা আখিরাতের চেয়ে দুনিয়ার মোহকে প্রাধান্য দেয় (সূরা আন-নাজম ৫৩:২৯-৩০)।

৩. গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত: কারবালা

ইতিহাসে বারবার প্রমাণিত হয়েছে যে, সত্যের পথে অল্পসংখ্যক মানুষ অবিচল থাকে। কারবালার ঘটনায় ইমাম হুসাইন (আ.)-এর সাথে মাত্র ৭২ জন সাথী ছিলেন, কিন্তু ইয়াজিদের পক্ষে ছিল ৩০ হাজারের বেশি সৈন্য। এটি প্রমাণ করে যে, সংখ্যাগরিষ্ঠতা সত্যের মাপকাঠি নয়।

ইমাম আলী (আ.) বলেছেন:
“فیهِ رَبیعُ القُلوبِ وَیَنابیعُ العِلمِ وَ ما لِلقَلبِ جِلاءٌ غَیرُهُ”
“কুরআনের মাধ্যমে হৃদয়ে বসন্তের হাওয়া প্রবাহিত হয়, কুরআন বহুমুখী প্রজ্ঞার উৎস এবং ঝরণা-ধারা, যার মাধ্যম ছাড়া হৃদয় আলোকিত হয় না।” (নাহজুল-বালাগা, খুতবা নং ১৭৬)।

কুরআনের সূরা আনআমের ১১১-১২০ নং আয়াতে কেন্দ্রীয় বিষয়বস্তু হচ্ছে, কাফেরদের অজ্ঞতা ও মূর্খতাপূর্ণ আচরণ ও সংলাপের দিকে প্রজ্ঞাবান ও চিন্তাশীল মানুষদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা। হাদিসে বর্ণিত আছে যে, মুশরিকরা নবী (সা.)-কে বলেছিল, “যদি তুমি সত্য বলে থাকো, তাহলে আমাদের প্রস্তাবিত অলৌকিক বিষয়গুলো ঘটিয়ে দেখাও এবং সাফা ও মারওয়া পাহাড়কে স্বর্ণে পরিণত করে দাও।” তখন তাদেরকে উদ্দেশ্য করে আল্লাহ তাআলা নিচের আয়াতটি নাজিল করে বলেন:

“وَلَوْ أَنَّنَا نَزَّلْنَا إِلَيْهِمُ الْمَلَائِكَةَ وَكَلَّمَهُمُ الْمَوْتَىٰ وَحَشَرْنَا عَلَيْهِمْ كُلَّ شَيْءٍ قُبُلًا مَّا كَانُوا لِيُؤْمِنُوا إِلَّا أَن يَشَاءَ اللَّهُ وَلَٰكِنَّ أَكْثَرَهُمْ يَجْهَلُونَ”

“আমি যদি তাদের কাছে ফেরেশতা নাজিল করতাম আর তাদের সাথে মৃতরা কথাবার্তা বলত এবং তাদের সামনে তাদের প্রত্যাশিত সব বস্তুকে উপস্থিত করতাম, তবুও তারা ঈমান আনবে না। কিন্তু যদি আল্লাহ বাধ্য করতে চাইতেন (তবে তারা অবশ্যই ঈমান আনতো)। তাদের অধিকাংশই তো অজ্ঞ শ্রেণির লোক।”

এ আয়াতে বলা হয়েছে: আল্লাহ যদি ইচ্ছা করতেন, তবে তিনি সহজেই নির্বোধ ও অজ্ঞ লোকদেরকে প্রতিহত করতে পারতেন এবং তারা অবশ্যই ঈমান আনতো। কিন্তু আল্লাহ চেয়েছেন ভাল-মন্দের পথ বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা দিয়ে সবাইকে পরীক্ষা করতে। যেন তাদের নিজেদের প্রকৃতি (আসল রূপ) প্রকাশ হয়ে পড়ে। নবী (সা.) হাজার চেষ্টা করেও মুশরিকদের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হতে না পেরে, শেষ পর্যন্ত তাদের বিচার আল্লাহর উপর ছেড়ে দিয়েছেন।

মুশরিকরা যখন কুরআনের সত্যতা নিয়ে সন্দেহ, সংশয়ে কঠোরতা দেখাল, তখন আল্লাহ তাঁর নবীকে বলেন: (আপনি বলুন) আহলে কিতাবগণ জানে যে, এই কুরআন মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে এবং সত্য-সহকারে অবতীর্ণ হয়েছে। আর তাদের নিকট পূর্বের যে আসমানী কিতাব রয়েছে, সেখানে দ্বীন ইসলাম এবং এর সর্বশেষ নবীর আবির্ভাবের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে।

“وَ اَنۡزَلۡنَاۤ اِلَیۡكَ الۡكِتٰبَ بِالۡحَقِّ مُصَدِّقًا لِّمَا بَیۡنَ یَدَیۡهِ مِنَ الۡكِتٰبِ”
“আর আমি সত্য সহকারে তোমার প্রতি যে কিতাব নাযিল করেছি, তা পূর্ববর্তী কিতাবসমূহের সত্যায়নকারী ও সংরক্ষক।” (সূরা মায়িদা, আয়াত নং ৪৮)।

এখন যে সব লোক নবীদের হেদায়েত বা (পথ-নির্দেশ) মেনে চলবে না, তারা শাস্তি ও আযাবের শিকার হবে। কারবালার ঘটনার মতোই সংখ্যাগরিষ্ঠরা ভুল পথ বেছে নেবে এবং অল্পসংখ্যক লোক সঠিক পথে টিকে থাকতে পারবে।

বিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ আল-মিজানে বলা হয়েছে: “পৃথিবীর অধিকাংশ লোক ভ্রান্তি ও গোমরাহীতে পতিত হবে, কারণ আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে চলার ক্ষেত্রে তারা ধারণা ও অনুমানের উপরে নির্ভর করে। আর ধারণা ও অনুমানের ভিত্তিতে মানুষ প্রকৃত সত্যে পৌঁছাতে পারে না। মহান আল্লাহ তাআলা বিশেষ করে নবুওয়াত, কিতাব এবং আহকাম সংক্রান্ত বিষয়ে ইলম ও ইয়াকিন অর্থাৎ (জ্ঞান ও দৃঢ়-বিশ্বাসে) উপনীত হওয়ার উপর গুরুত্বারোপ করেছেন। জ্ঞান ও দৃঢ়-বিশ্বাসে উপনীত হওয়া ব্যতীত, তিনি তাঁর বান্দাদের উপর কখনই সন্তুষ্ট হবেন না।”

মিডিয়া মিহির/ধর্ম ও বিশ্বাস/কামরুল হাসান

আরো পড়ুন..

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button