বিশ্বকুরআনকুরআন শিক্ষাজীবনযাপনতাফসীরধর্ম ও বিশ্বাসবিশেষ সংবাদ

কুরআনে আল্লাহর “সালাম” সম্পর্কে ওহাবী মতবাদ কী বলে?

ডক্টর মুহাম্মাদ ফারুক হুসাইন। প্রকাশ: ২০ অক্টোবর ২০২৫

মিডিয়া মিহির: ইসলামে “সালাম” শুধুমাত্র একটি সম্ভাষণ নয়; এটি এক ধরনের দোয়া, নিরাপত্তা ঘোষণা এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ সম্মানের প্রতীক। ওহাবি মতবাদও কুরআনে আল্লাহর “সালাম” শব্দটিকে একইভাবে গভীরতর অর্থে ব্যাখ্যা করে— যা কখনও প্রশংসা, কখনও সুরক্ষা, আবার কখনও রহমতের অঙ্গীকার হিসেবে প্রকাশিত হয়েছে।

প্রশ্ন:ওহাবী আকিদা অনুযায়ী কুরআনে আল্লাহর “সালাম” বলতে কী বোঝায়? এটি কি কেবল একটি শব্দ, নাকি এর গভীরে আরও অর্থ লুকিয়ে আছে?

উত্তর:সালাম” শব্দটি ইসলামী সংস্কৃতিতে এমন একটি দোয়া, যা এক মুসলমান অন্য মুসলমানকে উপহার দেয় এবং আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করে — তুমি যেন দুনিয়া ও আখিরাতের সব বিপদ-আপদ থেকে নিরাপদ থাকো।

সালামের মূল ধারণা

“সালাম” মুসলমানদের পারস্পরিক সাক্ষাতে একে অপরকে দেওয়া দোয়া। একজন মুমিন অন্যজনের জন্য প্রার্থনা করে — তিনি যেন দুনিয়া ও আখিরাতের সব বিপদ ও অকল্যাণ থেকে নিরাপদ থাকেন। কুরআনে এই শব্দটি বিভিন্ন প্রসঙ্গে এসেছে, এবং প্রতিটি ক্ষেত্রে এর তাৎপর্য ভিন্ন ভিন্ন হলেও সবগুলোর মাঝে নিরাপত্তা, সম্মান ও কল্যাণের সুর প্রতিধ্বনিত। কুরআনে “সালাম” বিভিন্ন প্রসঙ্গে এসেছে এবং প্রতিটি আয়াতে তার অর্থ ভিন্ন ভিন্ন। এই বিষয়ে সুন্নি, শিয়া কিংবা সালাফি (ওহাবী) আলেমদের মধ্যে তেমন কোনো মৌলিক মতভেদ নেই। এখানে উদাহরণ হিসেবে কয়েকটি দৃষ্টান্ত উল্লেখ করা হলো—

কুরআনে “সালাম” শব্দের বিভিন্ন তাৎপর্য

প্রশংসা ও সম্মানের অর্থে:
“سَلامٌ عَلَی نُوحٍ فِی الْعالَمینَ” – বিশ্বজগতে নূহের উপর শান্তি বর্ষিত হোক।
এ ধরনের আয়াতগুলোতে আল্লাহ তাঁর রাসূলদের প্রতি স্থায়ী সম্মান ও স্তুতি ঘোষণা করছেন।

নিরাপত্তা ও স্বস্তির অর্থে:
“یا نُوحُ اهْبِطْ بِسَلامٍ” – হে নূহ! তুমি নিরাপদে ভূমিতে অবতরণ করো।
এখানে “সালাম” অর্থ— ভয় ও বিপদ থেকে মুক্তি।

সংযমপূর্ণ বিদায় বা বিরোধ পরিত্যাগের অর্থে:
“وَإِذا خاطَبَهُمُ الجاهِلُونَ قالُوا سَلامًا” – মূর্খদের সাথে কথা হলে তারা বলে — ‘সালাম’।
অর্থাৎ তারা বিতর্কে না জড়িয়ে মর্যাদার সাথে সরে দাঁড়ায়।

স্বর্গীয় অভ্যর্থনা হিসেবে:
“سَلامٌ قَوْلًا مِنْ رَبٍّ رَحیمٍ” – পরম দয়ালু রবের পক্ষ থেকে তাদের প্রতি সালাম (অভিবাদন) আসবে।

অন্তরের পরিশুদ্ধতা ও স্থিরতার অর্থে:
“سَلامٌ هِیَ حَتّی مَطْلَعِ الْفَجْرِ” – ফজর উদয় হওয়া পর্যন্ত এটি শান্তি-নির্মল এক রাত (শবে কদর)।

উল্লিখিত সব অর্থ মিলিয়ে বলা যায়— কুরআনে আল্লাহর “সালাম” কখনও দোয়া, কখনও আশ্রয়, কখনও সম্মাননা, আবার কখনও নিরাপত্তার ঘোষণা। এটি কেবল একটি শব্দ নয়, বরং মানবাত্মার শান্তি, ঈমানের দৃঢ়তা ও আল্লাহর রহমতের এক চিরন্তন বার্তা। চাই তা আল্লাহর পক্ষ থেকে হোক কিংবা বান্দার পক্ষ থেকে — “সালাম” সর্বদাই অশুভ শক্তি থেকে সুরক্ষার ঘোষণা এবং কল্যাণের সুসংবাদ।

আরও অধ্যয়নের জন্য প্রস্তাবিত গ্রন্থসমূহ

১.  তাফসির ইবনে কাসির, খণ্ড ৩ ও ৪ (পৃষ্ঠা ২০, ৫৩২, ৩৩৯ এবং খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৫২)
২.  রূহুল মা’আনি, খণ্ড ৩০, পৃষ্ঠা ১৯৭
৩. তাফসির আবু সু’উদ, খণ্ড ৭, পৃষ্ঠা ১০৭
৪. রূহুল মা’আনি, খণ্ড ১১, পৃষ্ঠা ১০২

পাদটীকা

[১] মাজমাউল বাহরাইন, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ১১৩
[২] সূরা আস-সাফ্‌ফাত, আয়াত ৭৯
[৩] সূরা আস-সাফ্‌ফাত, আয়াত ১৮১
[৪] তাফসির ইবনে কাসির, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ২৬
[৫] সূরা ইউনুস, আয়াত ৪৮
[৬] জাদুল মসীর, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ১১৫ এবং তাফসির বায়যাভি, খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ২৩৮
[৭] সূরা আল-ফুরকান, আয়াত ৬৩
[৮] রূহুল মা’আনি, খণ্ড ১১, পৃষ্ঠা ৭৫
[৯] সূরা ইয়াসিন, আয়াত ৫৮
[১০] তাফসির আল-বাগভি, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ১৬ অথবা তাফসির আবু সু’উদ, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ১২৪ অথবা আদ-দুররুল মানসুর, খণ্ড ৭, পৃষ্ঠা ৬৬
[১১] সূরা আল-কদর, আয়াত ৫
[১২] তাফসির ইবনে কাসির, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ৫৩২

আরও পড়ুন 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button