কীভাবে ইসলাম হাজার বছরের নারীবিরোধী অত্যাচারের শিকড় ছেদ করল?
ডক্টর মুহাম্মাদ ফারুক হুসাইন। প্রকাশ: ১৩ নভেম্বর ২০২৫
মিডিয়া মিহির: ইসলাম নারীর মর্যাদা ও স্বতন্ত্র অধিকার পুনঃস্থাপন করল। ইসলামের দৃষ্টিতে নারী ও পুরুষ উভয়ই সমান সৃষ্টি; কোনো প্রাকৃতিক বা সামাজিক কারণে একজন আরেকজনের চেয়ে শ্রেষ্ঠ নয়। মানব ইতিহাসের প্রায়শ: নারীর ওপর চড়া সামাজিক প্রভাব ও বৈষম্য ইসলামের আগমনের পূর্বে সাধারণ ছিল।
ইসলামের দৃষ্টিতে নারীর পরিচয় ও মর্যাদা
বিশ্বের সমস্ত সমাজে, আমরা যা দেখেছি, নারীদের ওপর দীর্ঘকালীন শাসন, দমন এবং বৈষম্য ছিল। নারীর শরীর ও মন যেন এক প্রাকৃতিক দুর্বলতা ও পাপিতার প্রতীক হয়ে গিয়েছিল। সমাজে নারীর নাম নাজুকতার সমার্থক হয়ে উঠেছিল, এমনকি নারীর নিজস্ব উপলব্ধিতেও।
যেখানে যে সমাজের দিকে তাকানো হোক না কেন—অতি-অগ্রসর বা প্রাচীন—নারীর ওপর মানসিক ও সামাজিক সীমাবদ্ধতার দৃষ্টান্ত অবধারিতভাবে বিদ্যমান ছিল। আরব কবিতায়ও দেখা যায়, দুর্বল, ভীতু বা আত্মনম্র পুরুষকে “নারীর মতো” আখ্যায়িত করা হতো।
ইসলাম: নারীও মানুষ
ইসলাম স্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করেছে—নারীও মানুষ, ঠিক পুরুষেরই সমতুল্য। প্রতিটি মানবসত্তা—সে পুরুষ হোক বা নারী—একই উৎস থেকে উদ্ভূত; সৃষ্টির এই মহা-রহস্যে নর ও নারী উভয়েরই রয়েছে সমান অংশীদারি। জন্ম, মর্যাদা ও সত্তার ক্ষেত্রে কারও ওপর কারও শ্রেষ্ঠত্ব নেই। প্রকৃত শ্রেষ্ঠতা কেবল তাকওয়ায়—যে হৃদয়ে আল্লাহভীতি গভীর, তারই মর্যাদা সর্বোচ্চ।
আল্লাহ তাআলার কোরআনের বাণী:
«يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّا خَلَقْنَاكُمْ مِنْ ذَكَرٍ وَأُنْثَیٰ وَجَعَلْنَاكُمْ شُعُوبًا وَقَبَائِلَ لِتَعَارَفُوا ۚ إِنَّ أَکْرَمَکُمْ عِنْدَ اللَّهِ أَتْقَاکُمْ»
অর্থাৎ, আমরা আপনাদেরকে পুরুষ ও নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং আপনাদেরকে বিভিন্ন সম্প্রদায় ও গোত্রে ভাগ করেছি, যাতে একে অপরকে চেনা যায়। আল্লাহর কাছে সবার শ্রেষ্ঠত্ব তাদের তাকওয়ার ওপর নির্ভরশীল।
আরেকটি আয়াতে স্পষ্ট বলা হয়েছে:
«أَنِّی لَا أُضِیعُ عَمَلَ عَامِلٍ مِنْکُمْ مِنْ ذَکَرٍ أَوْأُنْثَیٰ ۖ بَعْضُکُمْ مِنْبَعْضٍ»
অর্থাৎ, কোনো মানুষের পরিশ্রম ও কর্ম বৃথা যাবে না, কারণ আমরা সকলেই একে অপরের অংশ। নারী ও পুরুষ উভয় সমানভাবে আল্লাহর নিকট গৃহীত।
পুরোনো সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির বিপরীতে ইসলামের বিপ্লব
ইসলামের আবির্ভাবের আগে সমাজে একটি কঠিন ও অন্যায় বিশ্বাস দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত ছিল—
১. নারীর পাপ, দুর্বলতা ও ব্যর্থতার দায় কেবল তারই নিজের।
২. আর তার সাফল্য, পরিশ্রম ও অর্জনের গৌরব পুরুষদের প্রাপ্য।
ইসলাম এই ভ্রান্ত ও অবমাননাকর ধারণাগুলোকে চূর্ণবিচূর্ণ করে দেয়। সে ঘোষণা করে—নারীও স্বাধীন এক সত্তা, তারও আছে পরিশ্রমের অধিকার, সিদ্ধান্তের অধিকার এবং মর্যাদার পূর্ণ দাবিদার সে, যেমন একজন পুরুষ। পবিত্র কুরআনের ঘোষণা স্পষ্ট—
«كُلُّ نَفْسٍۭ بِمَا كَسَبَتْ رَهِينَةٌ»
প্রত্যেক আত্মাই তার কর্মের ফলের জন্য দায়বদ্ধ।” (সূরা মুদ্দাসসির, ৭৪:৩৮)
এই ঐশী বাণীর মাধ্যমে ইসলাম নারীর ওপর হাজার বছরের বৈষম্য, শোষণ ও অবমাননার ইতিহাসে এক মহান ইতি টানে। সে প্রতিষ্ঠা করে নারীর প্রকৃত মর্যাদা—যেখানে নারী আর অবজ্ঞার প্রতীক নয়, বরং মানবতার পূর্ণাঙ্গ অংশ, মর্যাদা ও অধিকারে পুরুষের সমান এক আলোকিত সত্তা।
সূত্র: তাফসিরে আল-মিজান, খণ্ড ২,।



