জীবনযাপনধর্ম ও বিশ্বাসবিশেষ সংবাদবিশ্ব

কীভাবে ইমাম মাহদী (আ.) সমগ্র মানবজাতির মুক্তিদাতা হবেন?

ডক্টর মুহাম্মাদ ফারুক হুসাইন। প্রকাশ: ৮ ডিসেম্বর ২০২৫

মিডিয়া মিহির: মানবসম্ভব সকল সীমাবদ্ধতার পর্দা অতিক্রম করে ইমাম মাহদী (আ.)-এর পবিত্র সত্তা এমন এক সর্বজনীন মুক্তিদাতার প্রতীক—যাঁর দয়া ও হেদায়েত কোনো ভূগোল, কোনো যুগ বা কোনো সীমায় আবদ্ধ নয়; বরং সমগ্র মানবসমাজের জন্য চিরকাল প্রসারিত।

মানবিক অস্তিত্ব স্বভাবতই সময়ের স্রোত ও স্থানের সীমানায় আবদ্ধ। মানুষের প্রভাব, তার সাধ্য ও তার দিশা—সবই এক সীমিত পরিসরেই কার্যকর। কিন্তু এই সীমাবদ্ধতার বিপরীতে ইমাম মাহদী (আ.)-এর পবিত্র অস্তিত্ব এমন এক অসামান্য, সর্বকালীন ও সর্বজনীন পরিত্রাতা—যিনি কোনো এক অঞ্চল বা যুগবিশেষের নয়; বরং সমগ্র পৃথিবীর মানুষের জন্য মুক্তির দ্বার উন্মোচন করেন।

বহু সময় মানুষের মনে প্রশ্ন জাগে—যেহেতু মানুষ নিজেও সমাজে দিশা দেখাতে পারে, তবে কেন প্রত্যেকে নিজেকে মুক্তিদাতা হিসেবে গড়ে তুলতে পারে না? কেন এক নির্দিষ্ট, প্রতিশ্রুত “মুক্তিদাতা”-র আবির্ভাবের জন্য অপেক্ষা করতে হয়?

মুক্তিদাতা” শব্দটি কেবল সাহায্যকারী নয়—এটি চূড়ান্ত রক্ষাকর্তা, সর্বশেষ দিশারী ও সমগ্র মানবজাতির পথপ্রদর্শকের পরিচয় বহন করে। মহানবী মুহাম্মদ (সা.) নিজেই মানবতার এমন এক উজ্জ্বল পরিত্রাতা ছিলেন। ইতিহাসজুড়ে অগণিত নবী ও ইমাম মানবসমাজকে অজ্ঞতা, অবিচার ও অন্ধকারের বন্ধন থেকে মুক্ত করার জন্যই আগমন করেছেন।

মানবসমাজের উন্নতি, জ্ঞানচর্চা ও নৈতিকতার বিকাশে নিবেদিত মানুষরাও এক অর্থে নাজাতদাতা; তারা নিজেদের আলো দিয়ে অন্যদের পথ উন্মুক্ত করেন।

ইমাম মাহদী (আ.)—মুক্তির অসীম দিগন্ত

কিন্তু মানুষের ভূমিকা কতটুকুই বা বিস্তৃত হতে পারে? ইতিহাসের প্রাচীর, ভূগোলের সীমানা এবং মানবশক্তির সীমাবদ্ধতা তাকে বেঁধে রাখে। ঠিক এইখানেই ইমাম মাহদী (আ.)-এর মুক্তিদাতা-রূপ অনন্য ও অতুলনীয়। তাঁর পরিত্রাণ-বার্তা কোনো যুগ বিশেষের নয়, কোনো জাতি বিশেষের নয়—এটি সমগ্র মানবজাতির জন্য চিরন্তন এক আহ্বান।

মানৱিক সীমাবদ্ধতার ঊর্ধ্বে তাঁর এই সর্বজনীনতা তাঁকে পরিণত করে মানবতার চূড়ান্ত মুক্তিদাতায়—যিনি পৃথিবীর অন্ধকার উদাসীনতায় নয়, বরং আলোর সামগ্রিকতায় সকলকে পথ দেখান।

দর্শন নয়, সন্তুষ্টিই প্রকৃত প্রাপ্তি

আরেকটি প্রশ্ন জন্ম নেয়—কেন সবাই তাঁর দর্শন লাভ করে না? সত্য হলো, দর্শনই উদ্দেশ্য নয়; বরং তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনই সর্বোচ্চ সৌভাগ্য। আরিফ ও আলেমগণের বাণী—যেমন আয়াতুল্লাহ বাহজাত (রহ.)—এই কথাই বলে: দর্শন হোক বা না-হোক, তাঁর সন্তুষ্টির পথে অটল থাকাই শ্রেষ্ঠ সফলতা।

যদি কোনো যুগে অল্পসংখ্যক মানুষই তাঁকে প্রত্যক্ষ করে, তবু তাঁর হেদায়েত ও নাজাত শুধুমাত্র সেই প্রজন্মে সীমাবদ্ধ নয়—এটি সমগ্র মানবতার জন্যই চিরকালীন এক দান।

রাজআত—মুক্তি ও বিচার পাওয়ার দ্বিতীয় প্রভাত

শিয়া বিশ্বাসে “রাজআত” বা পুনরাগমন এক বিস্ময়কর সত্য—যেখানে নেককারেরা ফিরে এসে ইমাম মাহদীর (আ.) বরকত লাভ করেন, আর অপরাধীরা ফিরে এসে নিজেদের কর্মের ন্যায়বিচার প্রত্যক্ষ করেন। কোরআনের আয়াত “وَلَئِن مُّتُّمْ أَو قُتِلْتُمْ لَإِلَى اللَّهِ تُحْشَرُونَ”—এই প্রত্যাবর্তনের রহস্যময় আভাস বহন করে।

জুহুরের যুগ—শ্রেষ্ঠ ও নিকৃষ্টের প্রকাশ

জুহুরের সময়ে প্রকৃত শ্রেষ্ঠ তারা—যারা ঈমান, নৈতিকতা, তাকওয়া ও দায়িত্ববোধে অটল থাকে; যারা দোয়া-এ-আহদের অঙ্গীকারে দৃঢ়। তারাই রাজআতে ফিরে এসে ইমাম মাহদীর (আ.) সান্নিধ্যের বরকত লাভের সম্মান অর্জন করবে। আর যারা মন্দ ও অন্ধকারে নিমজ্জিত—তারা ফিরে এসে নিজেদের আমলের শাস্তির মুখোমুখি হবে।

আরও পড়ুন 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button