কীভাবে ইমাম মাহদী (আ.)–এর সঙ্গে হৃদয়ের সেতুবন্ধন গড়ে তোলা যায়?
ডক্টর মুহাম্মাদ ফারুক হুসাইন। প্রকাশ: ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫
মিডিয়া মিহির: জীবনের ঝড়ো সমুদ্রে কঠিন বাস্তবতাকে আলিঙ্গন করা, বিশেষ দোয়া ও জিয়ারতের আশ্রয়ে লুকিয়ে থাকা, ইস্তিগাসার নামাজের মধুর সুরে আত্মা জাগানো, এবং ইমাম মাহদী (আ.)-এর গভীর রহস্যময় জ্ঞানে নিজেকে নিমজ্জিত করা—এসব মিলেমিশে হৃদয়ের গভীরে প্রশান্তির একটি অমর নদী প্রবাহিত হয়। এই পথে দুনিয়ার কষ্ট যেন কাঁটার বাগান থেকে গোলাপের সুবাসে রূপান্তরিত হয়, কারণ ইমাম মাহদী (আ.)-এর স্নেহময় উপস্থিতি ও করুণাময় দৃষ্টি মানুষের পথকে মসৃণ করে, আত্মার অন্ধকারে আলোকের দীপ্তি ছড়িয়ে দেয়।
মাহদাবিয়াত বিষয়ক বিশেষায়িত কেন্দ্রের বিশেষজ্ঞ হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন মাহদি ইউসুফিয়ান এক প্রশ্নোত্তর পর্বে “ইমাম মাহদীর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের পদ্ধতি; কঠিন সময়ে প্রশান্তির পথ” শীর্ষক আলোচনায় এই বিষয়গুলো ব্যাখ্যা করেছেন।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
ইমাম মাহদী (আ.)চিঠিপত্রের রহস্যময় জগতে কিছু অমূল্য রত্ন লুকিয়ে আছে, যেগুলোর প্রতি আমাদের হৃদয়ের দৃষ্টি নিবদ্ধ করা অপরিহার্য। এই পত্রসমূহকে সাধারণত “তাওকী‘” নামে আখ্যায়িত করা হয়, যেন একটি গোপন স্বাক্ষরের মতো।
ইমাম মাহদীর তাওকী‘ বা চিঠিগুলো যেন দুটি সোনালি শাখায় বিভক্ত— প্রথম শাখা: সাধারণ মানুষের হৃদয় থেকে উঠে আসা চিঠি, যা বিশেষ প্রতিনিধিদের (নায়েবে খাস) সেতু দিয়ে ইমামের কাছে পৌঁছে। ইমাম (আ.) সেই চিঠির নিচে উত্তরের মুক্তা ছড়িয়ে দেন, এবং প্রতিনিধিরা তা ফিরিয়ে দেন সংশ্লিষ্ট আত্মার কাছে, যেন একটি প্রেমের প্রতিধ্বনি। দ্বিতীয় শাখা: স্বয়ং ইমাম মাহদী আলাইহিস সালামের পক্ষ থেকে জারি হওয়া চিঠি, যা মানুষের হৃদয়ে সরাসরি আলোকপাত করে, যেন আকাশ থেকে নেমে আসা বৃষ্টির ফোঁটা।
মরহুম শাইখ মুফিদ (রহ.) বিশেষ প্রতিনিধিদের যুগের সাক্ষী ছিলেন না; তিনি সেই সময়ের পরবর্তী যুগের আলোকবর্তিকা। তাহলে প্রশ্ন জাগে—ইমাম মাহদীর চিঠি কীভাবে তাঁর কাছে পৌঁছাল, যেন একটি অদৃশ্য নদীর প্রবাহ? গবেষণার গভীরতায় দেখা যায়, বিশেষ প্রতিনিধিত্বের যুগেও ইমাম (আ.) নিজের বিবেচনায় কখনো সরাসরি চিঠি পাঠাতেন কিছু নির্বাচিত আত্মার কাছে। সুতরাং শাইখ মুফিদের নামে বর্ণিত চিঠিগুলো যেন এই গোপন পথের ফসল, ইমামের বিশেষ অনুগ্রহের প্রমাণ।
ইমাম মাহদী (আ.) শাইখ মুফিদের প্রতি বিশেষ করুণা বর্ষণ করেছিলেন—তাঁর উচ্চ বৈজ্ঞানিক মর্যাদা এবং শিয়া সমাজে প্রভাবশালী ভূমিকার জন্য। এমনকি তাঁর ইন্তেকালের পরও একটি চিঠি জনসাধারণের হাতে পৌঁছে, যেন ইমামের অমর দৃষ্টির ছায়া। যদিও কেউ কেউ সময়ের ব্যবধান বা প্রতিনিধিদের অনুপস্থিতির কারণে এসব চিঠির সত্যতা নিয়ে ছায়া ফেলতে পারেন, তবে ঐতিহাসিক বর্ণনাগুলো যেন একটি উজ্জ্বল তারা, যা শাইখ মুফিদের প্রতি ইমামের গভীর মনোযোগকে আলোকিত করে।
প্রশ্ন: কীভাবে ইমাম মাহদী আলাইহিস সালামের সঙ্গে এমন সম্পর্ক গড়ে তোলা যায়, যা জীবনের কষ্টকে মধুর করে তোলে?
উত্তর: ১. দুনিয়ার কষ্টকে বাস্তবতার মতো আলিঙ্গন করা ইমাম মাহদী (আ.)-এর আবির্ভাব বা তাঁর সঙ্গে সম্পর্কের অর্থ কষ্টের সম্পূর্ণ অবসান নয়, বরং এটি যেন একটি অদৃশ্য শক্তির উৎস, যা কষ্টের ঝড়কে সহজে অতিক্রম করার বল প্রদান করে, হৃদয়ের বাগানে প্রশান্তির ফুল ফুটিয়ে তোলে।
২. ইমাম মাহদী (আ.) আল্লাহর সঙ্গে আমাদের সংযোগের সোনালি সেতু তিনি আল্লাহর খলিফা, আল্লাহর হুজ্জত—মানুষ ও সৃষ্টিকর্তার মাঝে যেন একটি অমর সেতু। তাঁর নির্দেশনা ও সহায়তা এই পথে আলোকপাত করে, হৃদয়ের অন্ধকারকে দূর করে।
৩. দোয়া ও জিয়ারতের আশ্রয়ে লুকিয়ে থাকা ইমাম মাহদী (আ.)-এর জন্য নির্দিষ্ট দোয়া ও জিয়ারত—যেমন জিয়ারতে আলে ইয়াসিন—হৃদয়কে যেন একটি শান্ত সাগরে পরিণত করে। কেবল সালামের মধুর সুরেও অন্তরে স্বস্তির বৃষ্টি নেমে আসে, কষ্টের ছায়া মিলিয়ে যায়।
৪. ইস্তিগাসার নামাজ: ইমামের কাছে সাহায্যের প্রার্থনা দুই রাকাত নামাজের সাথে সংক্ষিপ্ত দোয়ার মাধ্যমে ইমামের কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করলে আত্মিক প্রশান্তির একটি অমর ফোয়ারা উৎসারিত হয়, হৃদয়ের সম্পর্ক আরও দৃঢ় ও গভীর হয়ে ওঠে।
৫. ইমাম মাহদী (আ.) সম্পর্কে জ্ঞানের আলো বৃদ্ধি করা ইমামের সঙ্গে গভীর সম্পর্কের ভিত্তি হলো তাঁর সম্পর্কে সঠিক মারেফাত —যা যেন একটি অমর বীজ, যা থেকে প্রকৃত ভালোবাসা ফুটে ওঠে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে খাঁটি আমলের শক্তি প্রবাহিত হয়।
ইমাম হাসান (আ.) থেকে একটি সুন্দর বর্ণনা এক ব্যক্তি গভীর কষ্টের অন্ধকূপে নিপতিত হলে ইমাম হাসান (আ.) তাঁকে যেন একটি আলোকিত বাণী দিয়েছিলেন: যদি তুমি বিশ্বাস করো যে আল্লাহ সবচেয়ে দয়ালু এবং বান্দাদের জন্য সর্বোত্তমটাই চান, তবে যে অবস্থায় তুমি এখন আছ, সেটিই তোমার জন্য সর্বোত্তম—যেন একটি গোপন উপহার।
এই উপলব্ধি কষ্টকে সহজে সহ্য করার অদৃশ্য বল প্রদান করে, হৃদয়ে প্রশান্তির সুবাস ছড়ায়। কারণ তখন মানুষ জানে—ইমাম মাহদী (আ.) আমাদের সঙ্গেই আছেন, বহু বিপদকে দূরে সরিয়ে দেন, যেন একটি অদৃশ্য রক্ষাকবচ।
অতএব, দোয়া ও জিয়ারতের মাধ্যমে হৃদয়কে প্রশান্ত করুন এবং ইমাম মাহদী (আ.) সম্পর্কে মারেফাত বৃদ্ধি করুন, যাতে তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক যেন একটি অমর বন্ধন হয়ে ওঠে। আমরা যদি এই সত্যকে অন্তরে ধারণ করি, তবে উপলব্ধি করব—ইমামের দৃষ্টি ও অনুগ্রহের তুলনায় দুনিয়ার সব কষ্ট তুচ্ছ, এবং সেগুলো সহ্য করা যেন একটি মধুর যাত্রা।



