কিয়ামতের দিনের পাপীদের আকাঙ্ক্ষা: “হায়! যদি দুনিয়ায় ফিরে যেতাম”
রাসেল আহমেদ | প্রকাশ: ১৮ অক্টোবর, ২০২৫

মিডিয়া মিহির: কুরআনুল কারিমে বারবার মানুষকে সতর্ক করা হয়েছে যে, দুনিয়ায় পাপ ও অপরাধের পথ বেছে নেওয়া মৃত্যুর পর শুধুই আফসোস ও অনুতাপ বয়ে আনে।
যারা আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করে, রাস্তাঘাটের খারাপ সঙ্গ ও ভুল আচরণ গ্রহণ করে, তারা কিয়ামতের দিন বুঝতে চাইবে—হায়! আমরা যদি দুনিয়ায় ফিরে যেতাম, তাহলে আমরা এই ভুলগুলো করতাম না। এই “দেরিতে জাগ্রত অনুতাপ” বা অপরাধীদের দেরিতে অনুশোচনা কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে পরিষ্কারভাবে বর্ণিত।
১️. “হায়! যদি আমরা আবার দুনিয়ায় ফিরে যেতাম!”
وَلَوْ تَرَی إِذْ وُقِفُوا عَلَی النَّارِ فَقَالُوا یَا لَیْتَنَا نُرَدُّ وَلَا نُکَذِّبَ بِآیَاتِ رَبَّنَا وَنَکُونَ مِنَ الْمُؤْمِنِینَ
(সূরা আনআম, আয়াত ২৭)
যখন অপরাধীরা আগুনের সামনে দাঁড় করানো হবে, তখন তারা বলবে: “হায়! যদি আমরা দুনিয়ায় ফিরে যেতে পারতাম, তাহলে আমরা আল্লাহর আয়াতগুলোকে মিথ্যা বলতাম না এবং আমরা বিশ্বাসীদের অন্তর্ভুক্ত হতাম।”
এটি আমাদেরকে সতর্ক করে যে, দেরিতে অনুশোচনা কোনো কাজে আসে না।
২️. “হায়! যদি আমরা রাসুলের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতাম!”
وَیَوْمَ یَعَضُّ الظَّالِمُ عَلَی یدیهِ یَقُولُ یَا لَیْتَنِی اتَّخَذْتُ مَعَ الرَّسُولِ سَبِیلًا
(সূরা ফুরকান, আয়াত ২৭)
যখন অত্যাচারীরা কিয়ামতের দিন নিজের হাত কামড়াবে আর আপসোস করবে, তখন তারা বলবে: “হায়! যদি আমি রাসুলের সঙ্গে পথচলা শুরু করতাম, তবে আমি পথভ্রষ্ট হতাম না।”
৩️. “হায়! যদি তোমার সঙ্গে আমার দূরত্ব পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত হতো!”
حَتَّی إِذَا جَاءَنَا قَالَ یَا لَیْتَ بَیْنِی وَبَیْنَکَ بُعْدَ الْمَشْرِقَیْنِ فَبِئْسَ الْقَرِینُ
(সূরা যুখরুফ, আয়াত ৩৮)
খারাপ হদিসধারীদের মধ্যে কেউ কেউ একে অপরকে বলবে: “হায়! যদি আমাদের মধ্যে পূর্ব-পশ্চিমের মতো দূরত্ব থাকত! তুমি আমার জন্য সবচেয়ে খারাপ সঙ্গী (বন্ধু)।”
এটি সতর্কবার্তা যে খারাপ সঙ্গী আমাদের দুনিয়ার পথে বিভ্রান্ত করতে পারে।
৪️. “হায়! যদি আমি সেই বন্ধুকে বন্ধু হিসেবে বেছে না নিতাম!”
یَا وَیْلَتَا لَیْتَنِی لَمْ أَتَّخِذْ فُلَانًا خَلِیلًا لَقَدْ أَضَلَّنِی عَنِ الذِّکْرِ بَعْدَ إِذْ جَاءَنِی
(সূরা ফুরকান, আয়াত ২৮–২৯)
তারা বলবে: “হায়! যদি আমি فلانیকে বন্ধু না বানাতাম ! সে আমাকে সত্যপথ থেকে বিচ্যুত করেছে, যদিও আমি সত্য জানতাম।”
৫️. “হায়! যদি আমরা আল্লাহ ও রাসুলের আনুগত্য করতাম!”
یَقُولُونَ یَا لَیْتَنَا أَطَعْنَا اللَّهَ وَأَطَعْنَا الرَّسُولَا
(সূরা আহযাব, আয়াত ৬৬)
যখন তাদের মুখ আগুনে দিকে ঘোরানো হবে, তারা বলবে: “হায়! যদি আমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করতাম!”
এটি নির্দেশ করে যে, আত্মার জন্য শৃঙ্খলিত আনুগত্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
৬️. “হায়! যদি আমার আমলনামা আমাকে দেওয়া না হতো!”
یَا لَیْتَنِی لَمْ أُوتَ کِتَابِیَهْ وَلَمْ أَدْرِ مَا حِسَابِیَهْ، یَا لَیْتَهَا کَانَتِ الْقَاضِیَهْ
(সূরা হাক্কাহ, আয়াত ২৬–২৭)
যখন তাদের বাম হাতে আমলনামা দেওয়া হবে, তারা বলবে: “হায়! যদি আমার আমলনামা আমাকে না দেওয়া হতো, আর যদি মৃত্যু-ই আমার শেষ হতো!”
৭️. “কোনো শাফায়াতকারী আছে কি, যে আমাদের জন্য সুপারিশ করবে?”
قَدْ جَاءَتْ رُسُلُ رَبِّنَا بِالْحَقِّ فَهَلْ لَنَا مِنْ شُفَعَاءَ فَیَشْفَعُوا لَنَا أَوْ نُرَدُّ فَنَعْمَلَ غَیْرَ الَّذِی کُنَّا نَعْمَلُ
(সূরা আ’রাফ, আয়াত ৫২)
যারা দুনিয়ায় কিয়ামত ভুলে গিয়েছিল, তারা বলবে: “প্রভুর রাসুলগণ সত্যই এসেছেন। এখন কি আমাদের জন্য কেউ সুপারিশ করবে? অথবা আমরা কি আবার ফিরে যেতে পারি, যেন এবার ভালো কাজ করি?”
কিয়ামতের দিনে এই সব “হায় আফসোস” আর অনুতাপ আর কোনো কাজে আসে না। এগুলো বর্তমান মানুষের জন্য সতর্কবার্তা— আজই আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে হবে, আজই রাসুলের পথে ফিরে আসতে হবে, কারণ কাল আর ফিরে আসার সময় থাকবে না।



