কারো নায়েব হয়ে হজ আদায়ের পর, আমার হজের দায় কি শেষ?
ডক্টর মুহাম্মাদ ফারুক হুসােইন। প্রকাশ: ৩ ডিসেম্বর ২০২৫
মিডিয়া মিহির: হজ—ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভ, কাবার প্রতি হৃদয়ের টান, আল্লাহর মেহমান হওয়ার সেই অপূর্ব আমন্ত্রণ। কিন্তু শরীর যখন সঙ্গ দেয় না, বয়স বাধা হয়ে দাঁড়ায়, কিংবা মৃত্যু এসে দরজায় টোকা দেয়—তখন শরীয়তের রহমতের দরজা খুলে দেয় “হজে নায়েবী” বা বদলি হজের পথ। প্রশ্ন জাগে একটিই—যে অন্যের পক্ষে কাবায় গেল, তার নিজের ফরজ হজের দায় কি এতেই শেষ হয়ে গেল?
এই প্রশ্নের আলোকে সম্প্রতি জানতে চাওয়া হয়েছিল শীর্ষ মারজায়ে তাকলীদ হযরত আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী (হাফি.)-এর কাছে। তাঁর ফতোয়া যেন একটি স্পষ্ট দীপশিখা, যা হাজারো মানুষের মনের অন্ধকার দূর করে দিয়েছে।
প্রশ্ন:আমার দাদী হজের নিবন্ধন করেছিলেন, কিন্তু অসুস্থতা তাঁকে আর যেতে দেয়নি। আমার মা তাঁর পক্ষে হজ আদায় করে এসেছেন। এখন বলুন, আমার মায়ের নিজের ফরজ হজ কি এতেই পূর্ণ হয়ে গেছে, নাকি এখনো তাঁর ওপর সেই দায় বাকি আছে?
উত্তর:
যে ব্যক্তি অন্যের পক্ষে হজ আদায় করে, সে যদি নিজেও হজের শর্তসম্পন্ন (ইস্তিতাআত) হয়ে থাকে, তবে তার নিজের ফরজ হজ আলাদাভাবে আদায় করা আবশ্যক। অন্যের পক্ষে করা হজ তার নিজের ফরজের পরিবর্তে গণ্য হবে না।
অর্থাৎ—দাদীর পক্ষে মায়ের হজ আদায় করা একটি মহৎ আমল, একটি পুণ্যের সেতুবন্ধন। কিন্তু মায়ের নিজের ফরজ হজের যে আলাদা ডাক এসেছে, সে ডাক এখনো অপেক্ষমাণ। যতক্ষণ শারীরিক ও আর্থিক সামর্থ্য থাকবে, ততক্ষণ কাবার পথে তাঁর নিজের পায়ের ছাপ রাখা ফরজ হয়ে থাকবে।
সারকথা
বদলি হজ মৃতের বা অক্ষমের ফরজ আদায় করে দেয়, কিন্তু জীবিত ও সামর্থ্যবানের নিজের ফরজ কখনো বদলি হয় না। যে কাবার প্রতি একবার গেছে অন্যের হয়ে, সে যেন আরও আকুল হয়ে নিজের নামে সেই ডাকের অপেক্ষা করে। কেননা আল্লাহর মেহমানখানায় প্রতিটি আত্মার জন্য আলাদা আসন রচিত আছে।
তাই যারা প্রিয়জনের পক্ষে হজ করেছেন, তাদের জন্য সুসংবাদ এই যে—তোমার আমলের পাল্লা ভারী হয়েছে। আর সতর্কবাণী এই যে—তোমার নিজের হজের কাফেলা এখনো ছাড়েনি। যতক্ষণ সামর্থ্য আছে, ততক্ষণ কাবার পথে তোমার পায়ের ধুলো এখনো বাকি।



