কথায় শান্তি, কাজে যুদ্ধ: জাতিসংঘে ট্রাম্পের প্রতীকী ভাষণ
রাসেল আহমেদ | প্রকাশ: ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

মিডিয়া মিহির: জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতির আহ্বান যেন মানবিক কূটনীতির এক দৃশ্যপট তৈরি করেছিল, কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন গল্প বলছে। নিরাপত্তা পরিষদে যুক্তরাষ্ট্রের বারবার ভেটো প্রমাণ করছে, ওয়াশিংটনের নীতি এখনো ইসরায়েলকেন্দ্রিক এবং কৌশলগত স্বার্থকে মানবিক বিবেচনার উপরে স্থান দেয়। এই বৈপরীত্য শুধু মার্কিন কূটনীতির বিশ্বাসযোগ্যতাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করছে না, বরং গাজার যুদ্ধ বন্ধের আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টাকেও জটিল করছে।
জাতিসংঘে ট্রাম্পের শান্তির বার্তা
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানান। কিন্তু বাস্তবে যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তা পরিষদে একের পর এক প্রস্তাবে ভেটো দিয়ে যুদ্ধবিরতির প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দিচ্ছে—যা স্পষ্ট কূটনৈতিক বৈপরীত্যের ইঙ্গিত দেয়।
২০২৫ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের ৮০তম সাধারণ পরিষদে ট্রাম্প বলেন নয়, গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধ থামাতে হবে। তবে একই সময়ে ওয়াশিংটন নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানো প্রস্তাবগুলোকে আটকে দেয়। এই দ্বৈত অবস্থান ট্রাম্প প্রশাসনের প্রকৃত উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলে।
নিরাপত্তা পরিষদে মার্কিন ভেটো
১৮ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তা পরিষদে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবে ভেটো দেয়, যেখানে গাজায় অবিলম্বে, নিঃশর্ত ও স্থায়ী যুদ্ধবিরতির পাশাপাশি মানবিক সহায়তার ওপর আরোপিত অবরোধ তুলে নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছিল। ১৫ সদস্যের মধ্যে ১৪টি দেশ এর পক্ষে ভোট দিলেও যুক্তরাষ্ট্র প্রত্যাশিতভাবেই এটি আটকে দেয়।

ভোটের পর জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের স্থায়ী প্রতিনিধি রিয়াদ মানসুর বলেন, মার্কিন ভেটো “গভীরভাবে দুঃখজনক” এবং এটি নিরাপত্তা পরিষদকে তার “মূল দায়িত্ব পালনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করেছে”, বিশেষত গণহত্যা রোধ ও বেসামরিকদের সুরক্ষার ক্ষেত্রে।
ইসরায়েলের অভিযানে নীরব সমর্থন
ট্রাম্প প্রশাসন ইসরায়েলের স্থল অভিযানের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। ক্রমবর্ধমান মানবিক বিপর্যয় ও আন্তর্জাতিক নিন্দার মুখেও মার্কিন নীতি ইসরায়েলের জন্য বাস্তব চাপ তৈরি করেনি। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানকে ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডে নীরব সমর্থন হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এটি দেখায় নয়, ওয়াশিংটন মানবিক বক্তব্যে জোর দিলেও বাস্তবে কৌশলগত জোটকে অগ্রাধিকার দেয়। এমন দ্বৈতনীতি মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
ট্রাম্পের ভাষণের বিশ্লেষণ
জাতিসংঘে ট্রাম্প ঘোষণা করেন নয়, “আমাদের গাজার যুদ্ধ এখনই থামাতে হবে।” তিনি দাবি করেন যে তিনি যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করতে সরাসরি কাজ করছেন। কিন্তু তাঁর ভাষণে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কোনো সরাসরি সমালোচনা ছিল না। বরং তিনি কিছু পশ্চিমা দেশের ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়াকে “হামাসকে পুরস্কৃত করা” বলে অভিহিত করেন।

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এর বিপরীতে বলেছেন, ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি কোনো পুরস্কার নয়, বরং একটি মৌলিক অধিকার।
ট্রাম্প মানবিক উদ্বেগ তুলে ধরলেও ইসরায়েলকে চাপ দেওয়ার মতো কোনো বাস্তব প্রস্তাব দেননি। এতে যুক্তরাষ্ট্র নিজেকে নিরপেক্ষ মধ্যস্থতাকারী হিসেবে তুলে ধরতে চায়, কিন্তু কার্যত ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক সমালোচনা থেকে আড়াল করে। এর ফলে মার্কিন নীতি ও বক্তব্যের মধ্যে গভীর ফাঁক স্পষ্ট হয়।
ট্রাম্পের ভাষণ মূলত প্রতীকী—শান্তির বার্তা দিলেও বাস্তবে নীতি অপরিবর্তিত থাকে। যুক্তরাষ্ট্র একদিকে নৈতিক নেতৃত্বের দাবি করে, অন্যদিকে তার কূটনৈতিক পদক্ষেপ ইসরায়েলের পক্ষে ভারসাম্য রক্ষা করে। এই বৈপরীত্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তোলে এবং গাজার সংঘাত নিরসনের পথকে আরও জটিল করে তোলে।



