একজন মুক্তিদাতার আগমনের প্রত্যাশা
ডক্টর মুহাম্মাদ ফারুক হুসাইন। প্রকাশ: ১৪ অক্টোবর ২০২৫
মিডিয়া মিহির: মুক্তিদাতার আগমনের প্রত্যাশা একটি মৌলিক বিশ্বাস, যা বিভিন্ন আসমানী ধর্মে বিরাজমান। এটি শুধুমাত্র খ্রিষ্টধর্মেই সীমাবদ্ধ নয়; ইহুদি ধর্ম, জোরাস্ট্রিয়ানিজম, এবং বিশেষভাবে ইসলামেও এ বিশ্বাস সুস্পষ্টভাবে বিদ্যমান। এই প্রত্যাশা মানবজাতির জীবনে একটি চিরন্তন আশা এবং নৈতিক অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে বিবেচিত হয়।
মুসলিম বুদ্ধিজীবী মুহাম্মাদ রেজা হাকিমি উল্লেখ করেছেন যে, মুক্তিদাতার আগমনের প্রত্যাশা কেবল ইসলামের ক্ষেত্রে নয়, বরং খ্রিষ্টধর্মের তিনটি প্রধান সম্প্রদায়—ক্যাথলিক, প্রোটেস্ট্যান্ট ও অর্থোডক্স—এও প্রতিষ্ঠিত একটি নীতিরূপে বিদ্যমান। এ ছাড়াও, ইহুদি ধর্ম ও জোরাস্ট্রিয়ানিজমেও এই বিশ্বাসের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। এটি প্রমাণ করে যে, মানবজাতির ইতিহাসে এক মহামূল্যবান ও সার্বজনীন ধারণা হিসেবে মুক্তিদাতার আগমন মানবচেতনায় গভীরভাবে প্রতিফলিত হয়েছে।
খ্রিষ্টধর্মে মুক্তিদাতার আগমনের বর্ণনা
খ্রিষ্টধর্মের বাইবেল গ্রন্থ ম্যাথিউ-তে মুক্তিদাতার আগমন সম্পর্কে স্পষ্টভাবে বর্ণনা রয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে:
“যখন মানবপুত্র তাঁর মহিমায় আসবেন, তখন সকল পবিত্র ফেরেশতাদের সঙ্গে মহাসিংহাসনে অধিষ্ঠিত হবেন। সব জাতি তাঁর কাছে সমবেত হবে, এবং তিনি তাদেরকে আলাদা করবেন, যেমন একজন রাখাল ভেড়া ও ছাগলকে পৃথক করে।”
এই বর্ণনা মানবজাতিকে নৈতিক ও আধ্যাত্মিক শিক্ষা দেয়। এটি নির্দেশ করে যে, মুক্তিদাতার আগমন কেবল বিচারক হিসেবেই নয়, বরং সকল মানুষের মধ্যে সঠিক ও অন্যায়কে পৃথক করার এক মহাসংঘটন হিসেবে সংঘটিত হবে। এটি কেবল খ্রিষ্টধর্মের অনুসারীদের জন্য নয়, বরং মানবজাতির নৈতিক চেতনার জন্যও একটি প্রেরণার উৎস।
মুক্তিদাতার প্রত্যাশার সার্বজনীনতা
মুক্তিদাতার আগমনের প্রত্যাশা প্রতিটি আসমানী ধর্মে কিছু না কিছু রূপে বিদ্যমান। এটি মানুষের আশা, নৈতিকতা এবং আধ্যাত্মিকতার সাথে সম্পর্কিত। প্রত্যেক ধর্মেই এ বিশ্বাস মানবকে অনৈতিকতা থেকে বিরত রাখার, ন্যায় ও সঠিক পথ অনুসরণের জন্য প্রেরণা যুগিয়েছে। ইসলামে, এ প্রত্যাশা মহদী (আ.)-এর আগমনের সাথে সম্পর্কিত এবং এটি মানবজাতির জন্য চূড়ান্ত ন্যায় ও শান্তির প্রতীক।
উপসংহারে বলা যায়, মুক্তিদাতার আগমনের ধারণা মানবজাতির আধ্যাত্মিক ইতিহাসে এক চিরন্তন মূলনীতি। খ্রিষ্টধর্মে ম্যাথিউ গ্রন্থে বর্ণিত বর্ণনা, অন্যান্য আসমানী ধর্মে এ বিশ্বাসের উপস্থিতি এবং ইসলামের শিক্ষা—সব মিলিয়ে এটি প্রমাণ করে যে, মানবজাতির নৈতিক ও আধ্যাত্মিক জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য মুক্তিদাতার আগমনের প্রত্যাশা এক সর্বজনীন নীতি।
উৎস:
১.দানেশনামাহ মাহদাভীয়াত, পৃঃ ৫১২।



