জীবনযাপনকুরআন শিক্ষাতাফসীরধর্ম ও বিশ্বাসবিশেষ সংবাদবিশ্ব

ইসলামে হিজাব ও বিবাহ বিলম্ব সম্পর্কিত ধারণার পর্যালোচনা

ডক্টর মুহাম্মাদ ফারুক হুসাইন। প্রকাশ: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

মিডিয়া মিহির:বর্তমান সময়ের তরুণী প্রজন্মের মধ্যে একটি সাধারণ প্রশ্ন হলো, হিজাব পরা এবং মেকআপ না করার কারণে কি তারা সামাজিকভাবে “অদৃশ্য” হয়ে যায় এবং তাদের বিবাহ বিলম্বিত হয়। এই প্রশ্নের মাধ্যমে দেখা যায়, আধুনিক সমাজে শালীনতা ও নৈতিকতা নিয়ে অনেক বিভ্রান্তি বিরাজ করছে। ইসলামি চিন্তবীদরা এই প্রশ্নের যথাযথ ব্যাখ্যা তুলে ধরেছে, যাতে প্রমাণ হয় যে হিজাব পরা নিজেই বিবাহ বিলম্বের কারণ নয়।

পূর্ণ ব্যাখ্যা:

তরুণী মেয়েদের জন্য বিবাহের চিন্তাভাবনা স্বাভাবিক এবং ন্যায়সঙ্গত। তবে বিবাহে বিলম্বের পেছনে শুধু হিজাব থাকা নয়, বিভিন্ন সামাজিক ও ব্যক্তিগত কারণ অবদান রাখে। যেমন:

১. মেয়েদের ওপর অতিরিক্ত প্রত্যাশা ও বাহ্যিক সৌন্দর্যের ওপর গুরুত্বারোপ,

২. উচ্চশিক্ষা অর্জনের আগ্রহ,

৩. সামাজিক কার্যকলাপ থেকে দূরে থাকা বা একান্ত জীবন যাপন।

এই প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য যে, হিজাব বা শালীনতা না রাখলে প্রার্থীর সংখ্যা বাড়বে এমন ধারণা যুক্তিসঙ্গত নয়।

মূল পয়েন্টসমূহ:

১. হিজাব ও শুদ্ধাচার: হিজাব পরা আল্লাহর নির্দেশ এবং বিশ্বাসী মুসলিমের জন্য আনন্দের বিষয়। অন্যদিকে, হাজারো অপ্রাসঙ্গিক পুরুষের সামনে নিজেকে প্রলুব্ধ করার জন্য দেখানো ইসলাম স্বীকার করে না।

২. বিভ্রান্তি সৃষ্টি: সাম্প্রতিক সময়ে কিছু ভুল ধারণা প্রচারিত হয়েছে যে, হিজাব না পরলে দ্রুত বিবাহ সম্ভব। তবে বাস্তবতা দেখায়, যেখানে হিজাব কম পরা হয়, সেখানে সব মেয়েই বিবাহিত নয়।

৩. বাস্তব উদাহরণ: অনেক হিজাব পরা মেয়েই সুখী বিবাহিত জীবন যাপন করছে, আবার যারা হিজাব বা শালীনতার প্রতি যত্নশীল নয়, তারা এখনও অবিবাহিত।

৪.সমাজে উপস্থিতি: যারা সমাজে অংশ নেন, তারা স্বাভাবিকভাবে দৃশ্যমান। স্কুল, কলেজ, কর্মক্ষেত্র ও সামাজিক অনুষ্ঠানে তারা দেখা যায়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো তাদের চরিত্র ও আচরণ, যেখানে অতিরিক্ত সাজগোজ বা প্রলুব্ধি নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

৫. সচেতন দৃষ্টিভঙ্গি: যারা শুধুমাত্র বাহ্যিক সৌন্দর্যকেই বিবাহের মানদণ্ড মনে করেন, তারা হয়তো সাজগোজ করা মেয়েদের দিকে বেশি মনোযোগ দেয়। কোরআনে বলা হয়েছে:

তুমি হয়তো কিছু অপছন্দ করো, অথচ তা তোমার জন্য ভালো, আর কিছু পছন্দ করো, অথচ তা তোমার জন্য ক্ষতি।

উপসংহার:

বিবাহে প্রার্থীর সংখ্যা গুরুত্বপূর্ণ নয়; গুরুত্বপূর্ণ হলো ভালো প্রার্থী পাওয়া। হিজাব পরা মানে একান্ত জীবনযাপন নয়, বরং মেয়েদের উচিত এমন আচরণ করা যাতে প্রার্থীরা নিশ্চিন্তভাবে একটি সুখী ও নিরাপদ ভবিষ্যতের দিকে এগোতে পারে। কম বা বেশি প্রার্থী থাকা মূল বিষয় নয়, বরং প্রার্থীর মান ও চরিত্র বিবাহের মূল ভিত্তি। হিজাব পরা একজন নারীকে সামাজিকভাবে অদৃশ্য করে না; বরং এটি তার নৈতিকতা, আত্মসম্মান এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের প্রতিফলন।

আরও পড়ুন

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button