ইসরায়েলি নিরাপত্তা দুর্গের হৃদয়ে প্রতিরোধের আঘাত / জেরুজালেমের মরণঘাতী অভিযানের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা
ডক্টর মুহাম্মাদ ফারুক হুসাইন| প্রকাশ: ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

মিডিয়া মিহির তাসনিম আন্তর্জাতিক ডেস্কের রিপোর্ট অনুযায়ী, যখন জায়নিস্ট সেনারা গাজা উপত্যকায় ভয়াবহ অপরাধ বাড়িয়ে চলেছে, ফিলিস্তিনিরা একদিনে দখলদারদের বিরুদ্ধে দুইটি বড় অভিযান চালিয়েছে। দখলদার শাসনের সরকারি ও সেন্সরকৃত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এর ফলে ১০ জনেরও বেশি জায়নিস্ট নিহত হয়েছে।
কয়েক ঘন্টায় ১০-এর বেশি জায়নিস্ট নিহত

গতকাল, জেরুজালেমে শহীদ অভিযানের পরপরই, যেখানে অন্তত ৭ জন নিহত এবং প্রায় ২০ জন জায়নিস্ট আহত হয়েছিল, ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ বাহিনী গাজার উত্তরে জাবালিয়ায় একটি ইসরায়েলি ট্যাঙ্কে আক্রমণের ঘোষণা দেয়। দখলদার সেনাবাহিনীর স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, এ অভিযানে ৫২তম ব্যাটালিয়নের এক লেফটেন্যান্ট সহ চার সেনা নিহত হয়।
হিব্রু গণমাধ্যম জানিয়েছে, হামাসের তিন যোদ্ধা এই অভিযানে অংশ নিয়েছিল। তারা একটি বিস্ফোরক ট্যাঙ্কের ভেতরে নিক্ষেপ করে এবং চালকের দিকে গুলি চালায়। এর ফলে ট্যাঙ্কে বিস্ফোরণ ও আগুন ধরে যায় এবং সব আরোহী নিহত হয়।
পর্যবেক্ষকদের মতে, এই দুই অভিযান গাজা, পশ্চিম তীর ও জেরুজালেমে দখলদারদের অপরাধ ও গণহত্যার বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের ন্যায্য প্রতিক্রিয়া।
দখলদারদের ভুল হিসাব
আরব রাজনৈতিক বিশ্লেষক মাহমুদ আর-রান্তিসি বলেন: যুদ্ধ শুরুর ৭০০ দিন পর গাজা শহর দখলের হুমকি এবং দখলদারদের হামলা বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে আমরা প্রতিরোধ অভিযানের গতি বৃদ্ধি এবং এর উন্নত সক্ষমতা প্রত্যক্ষ করছি।
তিনি আরও যোগ করেন: দখলদাররা এই যুদ্ধে কেবল নারী ও শিশু হত্যা ছাড়া আর কিছু অর্জন করতে পারেনি। সব সূচকই প্রমাণ করে, তারা হামাসকে ধ্বংস করতে পারবে না।
চাপ বাড়িয়ে ভুল ফলাফল
হেব্রনের আল-খলিল বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন বিলাল আল-শুবাকি বলেন: অভিজ্ঞতা প্রমাণ করেছে যে, ফিলিস্তিনিদের ওপর চাপ প্রয়োগ দখলদারদের লক্ষ্য পূরণ করতে পারে না, বরং এটি ফিলিস্তিনিদের অভিযানে প্রেরণা জোগায়।
তিনি বলেন: ইসরায়েলি মানসিকতা এই ধারণার ওপর ভিত্তি করে যে যা জোর করে অর্জন করা যায় না, তা আরও বেশি জোর প্রয়োগে সম্ভব হবে। এ কারণেই তারা উপনিবেশবাসীদের অস্ত্র দেওয়ার কথা আবারও তুলছে।
অভিযানের বহুমাত্রিক বার্তা
ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ বিশেষজ্ঞ হানি আল-দালি জানান: জেরুজালেমের রামাত ক্রসিংয়ে হওয়া অভিযান, যেখানে ২০-এর বেশি জায়নিস্ট নিহত ও আহত হয়েছে, তা শুধু একটি সামরিক অভিযান নয়; এর মধ্যে প্রতিরোধের স্থায়িত্ব ও ফিলিস্তিনিদের মনোবল বৃদ্ধির বার্তাও রয়েছে।
তিনি শিহাব নিউজ এজেন্সিকে বলেন: এই অভিযান প্রমাণ করে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ শক্তি জটিল অভিযান পরিচালনা করতে সক্ষম। এটি ফিলিস্তিনিদের আত্মবিশ্বাস বাড়ায় এবং প্রতিরোধ কৌশল পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে তাদের সক্ষমতা তুলে ধরে।
ইসরায়েলি সমাজ আর শান্তি দেখবে না
আল-দালি জোর দিয়ে বলেন: জেরুজালেমের শহীদ অভিযান দখলদারদের ভেতরে তীব্র চাপ সৃষ্টি করেছে এবং দেখিয়েছে, যতদিন তারা ফিলিস্তিনিদের ওপর আগ্রাসন চালাবে, ততদিন তারা অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ভোগ করতে পারবে না। এটি তাদের মনস্তাত্ত্বিক ও নৈতিক দুর্বলতাকে বাড়িয়ে তুলবে।
তিনি আরও বলেন: জেরুজালেমের অভিযানকে গাজার অবস্থা থেকে আলাদা করে দেখা যাবে না। এটি প্রমাণ করে যে সব ফিলিস্তিনি ফ্রন্ট একই যুদ্ধে যুক্ত এবং প্রতিরোধ একটি ঐক্যবদ্ধ ব্যবস্থা।
ইসরায়েলি কৌশলে প্রভাব
এই অভিযান ইসরায়েলের সামরিক কৌশলে প্রভাব ফেলবে—চাই তা নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা হোক বা রিজার্ভ সেনাদের ডাকার সিদ্ধান্ত। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে সেনারা ক্লান্ত হয়ে পড়বে এবং রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে তার প্রভাব পড়বে।
তিনি বলেন: এই অভিযান দেখায় যে প্রতিরোধ কোনো অস্থায়ী প্রতিক্রিয়া নয়, বরং একটি কৌশলগত ও স্থায়ী পছন্দ।
জেরুজালেম অভিযানের প্রধান বার্তা
ফিলিস্তিনি সাংবাদিক আবদুল্লাহ মুসলিম এই অভিযানের কয়েকটি বার্তা এভাবে ব্যাখ্যা করেছেন:
- ইসরায়েলি সেনা পরিকল্পনায় আঘাত: গাজায় বড় আক্রমণের প্রস্তুতির সময়েই অভিযান হয়েছে, যা তাদের কৌশল ব্যাহত করেছে।
- রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে প্রভাব: ইউরোপ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার সম্ভাবনার প্রেক্ষাপটে এই অভিযান পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে।
- ইসরায়েলি নিরাপত্তা ঘাঁটির কেন্দ্রে আঘাত: কঠোর নিরাপত্তা, নজরদারি ক্যামেরা, উপনিবেশবাসীদের অস্ত্র সজ্জা ও বিশাল খরচও এই অভিযান ঠেকাতে পারেনি।
- নেতানিয়াহুর ব্যক্তিগত ব্যর্থতা: গাজায় যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করে প্রচার চালাতে চাইলেও, জেরুজালেম ও জাবালিয়ার অভিযান তাকে এবং সেনাবাহিনীকে বড় ব্যর্থতার মুখোমুখি করেছে।