সংবাদ বিশ্লেষণSliderবিশ্ব

ইয়েমেনের সশস্ত্র বাহিনী কর্তৃক ইসরাইলের হাইফা বন্দরে সামুদ্রিক অবরোধ

মুহাম্মদ মুনীর হুসাইন খান | প্রকাশঃ ২১মে ২০২৫

ইয়েমেনের সশস্ত্র বাহিনী কর্তৃক ইসরাইলের হাইফা বন্দরে সামুদ্রিক অবরোধ

  ধিক্কার ও নিন্দা জানাই মুসলিম দেশগুলোর প্রতি! তারা মজলুম গাজাবাসী ও ফিলিস্তিনিদের জন্য কিছুই করছে না। তাদের উচিত ইয়েমেনের সাহসী হুথি আন্দোলনের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে অবৈধ ইসরাইলি দখলদারদের বিরুদ্ধে দৃঢ়ভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলা। ইসরাইল রাষ্ট্রের বর্বরোচিত আগ্রাসন, নিরীহ ফিলিস্তিনি নাগরিকদের ওপর গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে কার্যকর ভূমিকা নিতে হবে। আরব দেশগুলোর অবস্থা আরও দুঃখজনক ও হতাশাব্যঞ্জক। এই দেশগুলো – বিশেষ করে রাজতান্ত্রিক আরব দেশগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের করদ রাজ্যের চেয়েও হীন-নীচ। এসব দেশের শাসক চক্রকে মুসলমান বলা উচিত নয়, কারণ এরা বিধর্মী নাসারা (খ্রিস্টান) ও ইহুদিদের কর্তৃত্ব ও আধিপত্য মেনে নিয়েছে – যা পবিত্র কুরআনের নিম্নোক্ত আয়াত অনুযায়ী সম্পূর্ণ হারাম। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন,

“وَ لَنْ یَّجْعَلَ اللّٰهُ لِلْکَافِرِیْنَ عَلَی الْمُؤْمِنِیْنَ سَبِیْلَاً
আর মহান আল্লাহ কখনোই মুমিনদের ওপর কাফিরদের (আধিপত্য বিস্তারের) পথ প্রস্তুত করে দেবেন না। ( সূরা-ই নিসা:১৪১)”

এ আয়াতে মহান আল্লাহ মুমিন মুসলমানদের ওপর কাফির-মুশরিকদের আধিপত্য, কর্তৃত্ব ও প্রতিপত্তি হারাম করেছেন। তাই কোনো কাজ, পদক্ষেপ ও উদ্যোগ – যা মুসলমানদের ওপর কাফির-মুশরিকদের আধিপত্যের পথ প্রশস্ত করে – তা সম্পূর্ণরূপে হারাম। তাই সকল মুসলিম উম্মাহ এবং ইসলামী দেশগুলোর ওপর ফরয ও অবশ্য কর্তব্য হচ্ছে – মুসলিম দেশ ও জাতির ওপর কাফিররা (অর্থাৎ বিধর্মীরা) আধিপত্য স্থাপন করলে বা করতে চাইলে, তাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম ও জিহাদ করা, যাতে এই আধিপত্য খর্ব বা ধুলিসাৎ করা যায় এবং কাফির শক্তি-কবলিত মুসলিম দেশ ও জাতিকে নাজাত দেওয়া সম্ভব হয়।

আর মুসলিম বিশ্বের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত ফিলিস্তিন ও ফিলিস্তিনী জাতি – যাদের মধ্যে গাজাবাসীও অন্তর্ভুক্ত – তারা বর্বর পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী শক্তিবর্গ, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও তাদের সহযোগীদের প্রত্যক্ষ ও সার্বিক মদদপুষ্ট, আধিপত্যকামী ও বিস্তারবাদী অপরাধী ইসরাইলের যুদ্ধ, আগ্রাসন, দখলদারিত্ব, গণহত্যা, উচ্ছেদ এবং সব ধরনের বৈষম্য, বঞ্চনা, অন্যায়, উৎপীড়ন, নির্যাতন, অত্যাচার, জুলুম ও অনাচারের শিকার।ফিলিস্তিন সমস্যা হচ্ছে মুসলিম উম্মাহ তথা বিশ্বমানবতার সকল সমস্যার মূল (উম্মুল মাসায়েল)।

এ সমস্যার ন্যায্য ও সুষ্ঠু সমাধান বিশ্বের সকল সমস্যা সমাধানের চাবিকাঠিস্বরূপ। তাই এই ফিলিস্তিন সমস্যার ন্যায্য ও সুষ্ঠু সমাধানের জন্য সকল মুসলিম দেশের উচিত, অবশ্য কর্তব্য ও ধর্মীয় ফরয হচ্ছে – ঐক্যবদ্ধভাবে যথার্থ কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া, যা ইসরাইলী দখলদারিত্ব, আগ্রাসন ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিরুদ্ধে জিহাদ ও প্রতিরোধ সংগ্রাম ছাড়া আর কিছুই নয়।”

মুসলিম দেশগুলোর জাতি ও সরকার কি পবিত্র কুরআনে বর্ণিত ইহদাল হুসনায়াইনের (إِحْدَى الْحُسْنَيَيْنِ) – অর্থাৎ জিহাদে বিজয় ও শাহাদাত – এ দুটো সবচেয়ে উত্তম পুরস্কারের যে কোনো একটি অথবা উভয়টির প্রত্যাশী ও আকাঙ্ক্ষী নয়?! গাজাবাসী, হামাস, জিহাদ-ই ইসলামী, হিযবুল্লাহ ও ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ – এই ইহদাল হুসনায়াইনের প্রত্যাশী ও আকাঙ্ক্ষী। আর তাই তাঁরা সঠিক জিহাদ করছেন।

’তূফানুল আকসা’ অভিযানের শুরুতে আল-কাসসাম ব্রিগেডের মুখপাত্র মুজাহিদ আবূ উবাইদা বলেছিলেন: “إِنَّهُ – طُوفَانُ الْأَقْصَىٰ – جِهَادٌ إِمَّا نَصْرٌ أَوِ اسْتِشْهَادٌ”
‘ইন্নাহু – তূফানুল আকসা – জিহাদুন ইম্মা নাসর আওয়িস্তিশহাদ’ (নিশ্চয়ই এটা – তূফানুল আকসা অভিযান – জিহাদ, হয় বিজয় নতুবা শাহাদাত)।

“وَ الَّذِیْنَ جَاهَدُوْا فِیْنَا لَنَهْدِیَنَّهُمْ سُبُلَنَا وَ إِنَّ اللّٰهَ لَمَعَ الْمُحْسِنِیْنَ”
অর্থ: “আর যারা আমাদের পথে সংগ্রাম করে, আমরা অবশ্যই তাদেরকে আমাদের পথ দেখাবো। নিশ্চয়ই আল্লাহ সৎকর্মশীলদের সাথে আছেন।” (সূরা আল-আনকাবুত ৬৯)

ইয়েমেনের হুথি আনসারুল্লাহ আন্দোলন যখন ইসরাইলের প্রধান বন্দরনগরী হাইফা এবং সবচেয়ে বড় বিমানবন্দর আল-লুদ্দের (বেন গুরিওন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর) ওপর সফল ও কার্যকর অবরোধ আরোপ করেছে, ঠিক তখন বেশ কিছু আরব ও মুসলিম দেশ ইসরাইলের সাথে কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক অব্যাত রেখেছে – যা সত্যিই গাদ্দারি, খিয়ানত (বিশ্বাসঘাতকতা), ঈমান-বিরোধী, লজ্জাকর ও দুঃখজনক।

আরও অবাক করার বিষয় হলো, কিছু আরব ও মুসলিম দেশ এই অপরাধী, জালিম ও বিধর্মী ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য গোপনে আলোচনায় লিপ্ত রয়েছে!! এরা ইসলামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিধান ফরযে জিহাদ ছেড়ে দিয়েছে। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে:
“যারা জিহাদ ত্যাগ করে, মহান আল্লাহ তাদেরকে অপদস্থ ও দারিদ্র্যপীড়িত করবেন এবং তারা ধর্মচ্যুতির শিকার হবে।”
(ফুরূউল কাফী, খণ্ড: ১, পৃ: ৩২৭)

মিডিয়া মিহির/সংবাদ বিশ্লেষণ

আরো পড়ুন..

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button