ইমাম হুসাইন (আ.) এর প্রেমী শিশুর কপালে নবীজির চুম্বন
ডক্টর মুহাম্মাদ ফারুক হুসাইন। প্রকাশ: ২২ অক্টোবর ২০২৫
মিডিয়া মিহির: রাসুলুল্লাহ (সা.) শিশুদের ভালোবাসতেন, বিশেষত তাদের যারা আহলে বাইতের প্রতি গভীর অনুরাগ পোষণ করত। তিনি তাদের স্নেহ করতেন, আদর করতেন—কারণ আহলে বাইতের প্রতি ভালোবাসা শুধু আবেগ নয়, বরং তা এক আধ্যাত্মিক সম্পদ, যা মানুষের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে।
আশুরার দিনে, ইমাম হুসাইন (আ.)-এর শাহাদাত এবং তাঁর সাথীদের আত্মত্যাগ মানবতার সামনে এমন স্বাধীনতা, সাহস ও হৃদয়ের গভীরতা প্রকাশ করে, যা মানুষের কল্পনারও অতীত।
এক শিশুর প্রতি নবীজির স্নেহ: ভালোবাসার প্রতিদান
প্রখ্যাত আলেম আয়াতুল্লাহ জিয়া-আবাদি তাঁর নৈতিক শিক্ষায় ইমাম হুসাইন (আ.)-এর প্রতি ভালোবাসার গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি বলেন, মরহুম শায়খ জাফর শোশতরি (রহ.) এক ঘটনা বর্ণনা করেছেন:
একদিন রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর সঙ্গীদের সঙ্গে পথ চলছিলেন। হঠাৎ তিনি দেখলেন, কিছু শিশু খেলায় মগ্ন। তিনি এগিয়ে গিয়ে এক শিশুকে কোলে তুলে নিলেন, তাকে আদর করলেন, কপালে চুম্বন করলেন।
সঙ্গীরা বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন: “ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি এই শিশুর প্রতি এত স্নেহ কেন?
রাসুলুল্লাহ (সা.) উত্তর দিলেন: আমি একদিন দেখেছি, এই শিশু আমার হুসাইনের সঙ্গে খেলছিল। সে হুসাইনের পায়ের ধূলা নিয়ে নিজের চোখে-মুখে মাখছিল। আমি তাকে ভালোবাসি, কারণ সে হুসাইনকে ভালোবাসে। জিবরাঈল আমাকে জানিয়েছে, এই শিশু কারবালার যুদ্ধে হুসাইনের সাথী হবে।
এরপর নবীজী (সা.) দোয়া করেন:
اللهم إني أحب حسينا، فأحب من أحب حسينا
হে আল্লাহ! আমি হুসাইনকে ভালোবাসি, তুমি তাকে ভালোবাসো, যে হুসাইনকে ভালোবাসে।
আশুরার বেদনা: রক্তে রাঙা ইতিহাস
আশুরার দিনে যা ঘটেছিল, তা মানব ইতিহাসে অতুলনীয় বেদনার অধ্যায়। মানুষ কল্পনাও করতে পারে না, কীভাবে একজন ব্যক্তি এমন সাহস, স্বাধীনতা ও আত্মত্যাগের পরিচয় দিতে পারে।
মরহুম শোশতরি (রহ.) বর্ণনা করেন, ইমাম হুসাইন (আ.)-এর শাহাদাতের পর তাঁর ঘোড়া তাঁর রক্তে গড়াগড়ি খেয়ে তাঁবুর দিকে ছুটে যায়। এই দৃশ্য ছিল এমন এক স্তরে, যা সাধারণ মানুষের অনুভবের ঊর্ধ্বে—এমনকি অনেক জ্ঞানী নারীর চেয়েও গভীর।
এরপর দেখা যায়, অনেকে নিজেদের মুখে ও শরীরে রক্ত মেখে, কান্না ও চিৎকারে তাঁবুর দিকে ছুটে যায়। এই ঘটনাগুলো আশুরার দিনে আহলে বাইতের ওপর নেমে আসা অসীম শোক ও বিপর্যয়ের গভীরতা প্রকাশ করে।
ভালোবাসা: আত্মার শক্তি ও পথের আলোক
এই ঘটনা আমাদের শেখায়, আহলে বাইতের প্রতি ভালোবাসা শুধু আবেগ নয়, বরং তা আত্মিক শক্তি, যা মানুষকে এগিয়ে নিয়ে যায়। এই ভালোবাসা যেন এক প্রবাহমান নদী, যা হৃদয়কে শুদ্ধ করে, আত্মাকে জাগ্রত করে।
আমরা যেন সেই দলের অন্তর্ভুক্ত হই, যাদের প্রতি আল্লাহ ভালোবাসা বর্ষণ করেন, কারণ তারা হুসাইন (আ.)-কে ভালোবাসে।



