ইন্না ‘আলাল্’ আহ্দ্ জিহাদ
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
মিডিয়া মিহির- ইন্না ‘আলাল্’ আহ্দ্ জিহাদ ও শাহাদতের অমৃত ধামে চির অমর শহীদ আয়াতুল্লাহ সাইয়েদ হাসান নাসরুল্লাহ সাইয়েদুল মুকাওয়ামাহ্ (প্রতিরোধ সংগ্রামের শীর্ষ নেতা) শহীদ আল-কুদস (মসজিদে আকসা মুক্ত ও পূণরুদ্ধারের শহীদ) আয়াতুল্লাহ সাইয়েদ হাসান নাসরুল্লাহ্ যিনি মর্দে মুজাহিদ ( বীরমুজাহিদ) মর্দে ময়দান (জিহাদ ও সংগ্রামের ময়দানের সিংহপুরুষ) ইসরাইলের বিরুদ্ধে জিহাদ ও সংগ্রামের মূর্ত প্রতীক লেবাননের ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হিযবুল্লাহর সেক্রেটারি জেনারেল।
আরব-আজমের নয়নমণি, নির্যাতিত মানুষের হৃদয়ে স্পন্দন ছিলেন, আগামী দিনের সংগ্রামীদের চেতনা হয়ে থাকবেন থাকবেন শহীদ সাইয়েদ হাসান নাসরুল্লাহ (রাঃ)। পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদ এবং ফিলিস্তীন দখলদার ও মুসলিম উম্মাহর প্রথম ক্বিবলাহ্ আল-কুদস জবরদখলকারী ইসরাইল বিরোধী লেবাননের ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হিযবুল্লাহর মহান নেতা ও তৃতীয় সেক্রেটারি জেনারেল শহীদ আয়াতুল্লাহ সাইয়েদ হাসান নাসরুল্লাহ্ এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ সহকারী, হিযবুল্লাহ আন্দোলনের নির্বাহী প্রধান ও (শহীদ সাইয়েদ হাসান নাসরুল্লাহর শাহাদাতের পর হিযবুল্লাহ আন্দোলনের) ৪র্থ সেক্রেটারি জেনারেল শহীদ সাইয়েদ হাশেম সাফীয়ুদ্দীনের শেষ বিদায় ও তাশয়ী’-ই জানাযার অনুষ্ঠান মিলিয়নের অধিক অগণিত শোকাহত জনতার অংশগ্রহণে শুরু হয়েছে আজ ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ রোববার ভোর ৫ টা থেকে অব্যাহতভাবে এখনও চলছে।
আর এ অনুষ্ঠান আজ সন্ধ্যায় শহীদ সাইয়েদ হাসান নাসরুল্লাহর দাফন পর্যন্ত বৈরুতে চলতে থাকবে। আগামী কাল শহীদ সাইয়েদ হাশেম সাফীয়ুদ্দীনের লাশ দক্ষিণ লেবাননে দাফন করা হবে। উল্লেখ্য যে আজ বৈরূতে প্রচণ্ড শীত, শূন্য ডিগ্রি তাপমাত্রা, বরফপাত ও বৃষ্টি উপেক্ষা করে লেবাননের জনতা লেবাননের বিভিন্ন স্থান ও অঞ্চল থেকে সাইয়েদ হাসান নাসরুল্লাহ ও সাইয়েদ হাশেম সাফীয়ুদ্দীনের শেষ বিদায় ও তাশয়ী’য়ে জানাযা অনুষ্ঠানে যোগদান করছেন। এই তাশয়ী’-ই জানাযার মাধ্যমে শেষ বিদায় অনুষ্ঠান চলাকালে বেশ কয়েকবার ইসরাইলী জঙ্গি বিমান সমূহ লেবাননের রাজধানী বৈরুতের আসমানে একদম নীচু দিয়ে উড়ে প্রচণ্ড শব্দ করে ভয় দেখানোর চেষ্টা করেছে। আর ৩টা ৩৩ মিনিটে আবারো ৪টি ইসরাইলী জঙ্গি বিমান বৈরূতের আকাশের নীরবতা ভঙ্গ করে প্রচণ্ড গর্জনে উড়ে গেল যা আমিও শুনতে পেলাম টেলিভিশনের সরাসরি সম্প্রচার কালে। আর এটাই হচ্ছে ইসরাইল এবং পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদ বিশেষ করে মাযুরার (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) আগ্রাসী রক্তপিপাসু চেহারা ও চরিত্র। এরা কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা করে না, কোনো দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি মোটেও এরা শ্রদ্ধাশীল নয়। অথচ লেবাননের নয়া প্রশাসন ও সরকার কি এ ধরনের আগ্রাসী রক্তপিপাসু জান্তা দখলদার ইসরাইলী সরকারের সাথে মৈত্রী ও শান্তি চুক্তিতে সন্তুষ্ট রয়েছে! এইমাত্র প্রাপ্ত খবরে প্রকাশ, কিছুক্ষণ পূর্বেই ইসরাইলী জঙ্গি বিমানগুলো লেবাননের নাবাতীয়া এলাকায় বোমাবর্ষণ করেছে এবং ক্ষয়ক্ষতি ও হতাহতের ব্যাপারে কোনো কিছু এখনো জানা যায়নি।
এতকিছুর পরও এই ইসরাইল আগ্রাসী যুদ্ধবাজ রক্তপিপাসু হায়েনাদের সহায়তাকারী খুনি পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদীদের সাথে লেবাননের জোযেফ আউনের সরকার বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সন্ধি করতে চায় যা থেকে প্রমাণিত হয় যে লেবাননের জোযেফ আউনের নয়া সরকার পশ্চিমা ও প্রতিক্রিয়াশীল আরব দেশগুলোর পুতুল সরকার ছাড়া আর কিছুই নয়। শহীদ আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ, শহীদ সাইয়েদ হাশেম সাফীয়ুদ্দীন এবং ফিলিস্তীন, লেবানন ও সকল মুসলিম দেশের শহীদগণ চির অমর। কারণ তাঁরা মহান আল্লাহর পথে মুজাহিদ ও শহীদ। মুজাহিদকে মহান আল্লাহ ইহ্দাল হুসনায়াইন (إحدی الحسنیین) অর্থাৎ দুটো উত্তম বিষয় বা সবচেয়ে সুন্দর প্রতিদান ও পরিণতির একটি দান করেন। আর এ দুটো উত্তম ও সবচেয়ে সুন্দর প্রতিদান ও পুরস্কার হচ্ছে বিজয় ও শাহাদাত এবং এ দুটোই হচ্ছে আল্লাহর রাহে মুজাহিদের পরম সফলতা। আর মুজাহিদ ও সংগ্রামী যখন শহীদ হন তখন তিনি হন পবিত্র কুরআনের এই আয়াত সমূহে বর্ণিত চিরস্থায়ী সর্বশ্রেষ্ঠ জীবনের সর্বোচ্চ পর্যায়ের অধিকারী চির অমর চিরঞ্জীব যা কল্পনাই করা যায় না। আয়াতগুলো: وَلا تَحسَبَنَّ الَّذينَ قُتِلوا في سَبيلِ اللَّهِ أَمواتًا ۚ بَل أَحياءٌ عِندَ رَبِّهِم يُرزَقونَ
(হে নবী!) যারা মহান আল্লাহর পথে আত্মদান করে তাদেরকে কখনোই তুমি মৃত বলনা বরং তাঁরা জীবিত স্বীয় প্রভুর সান্নিধ্যে তাঁরা রিযিক প্রাপ্ত হয়। (আলে ইমরান:১৬৯)।
لا تَقولوا لِمَن یُقتَلُ فی سَبیلِ اللهِ اَمواتٌ بَل اَحیاءٌ وَ لکِن لا تَشعُرون
যারা মহান আল্লাহর পথে নিহত হয় তাদেরকে তোমরা মৃত বলো না বরং তাঁরা জীবিত কিন্তু তোমরা (তা) অনুধাবন করো না। ( সূরাহ বাকারাহ্-১৫৪)। হে শহীদ সাইয়েদ হাসান নাসরুল্লাহ! তুমি ও তোমার শহীদ সঙ্গী-সাথীগণ দেখতে পাচ্ছ প্রত্যক্ষ করছ! তোমাকে ও তোমার সহকারী বন্ধু ও সঙ্গী সাইয়েদ হাশেম সাফীয়ুদ্দীনকে লেবাননের অগণিত শোকাহত জনতা কিভাবে শোকের আগুনে দগ্ধ হয়ে শেষ বিদায় জানাচ্ছে আর তারা বলছে: “লাব্বাইক ইয়া নাসরাল্লাহ্ ইন্না ‘আলাল্ ‘আহ্দ্ (নিশ্চয়ই আমরা প্রতিজ্ঞার উপর বহাল ও প্রতিষ্ঠিত আছি)।” শুধু লেবাননে নয় একই সময় আজ ইরান, ইরাক ও ইয়েমেনে জনসমুদ্র তোমাদের জন্য সড়ক ও জনপথ সমূহে স্রোতের মত নেমে এসে শোক প্রকাশ করছে ও শেষ বিদায় জানাচ্ছে। আজ মাগরিব ও এশার নামাজের পর ইরান ইরাক এবং মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে তোমাদের জন্য শামে গরীবানের অনুষ্ঠানে তোমাদের জন্য পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত, দুআ, তাওয়াসসুল ও শোক পালন করবে। হে সাইয়েদু শুহাদাইল মুকাওয়ামাহ্ (প্রতিরোধ আন্দোলনের শহীদদের শীর্ষ নেতা) আমাদের জন্য শাফায়াত কর মহান আল্লাহর দরবারে। তুমি পৌঁছে গিয়েছ তোমার ইস্পিত কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে, অনন্ত ধামে, অনন্ত চিরস্থায়ী জীবনের সর্বোন্নত আশ্রয়ে ও সর্বশীর্ষে যা তুমি সব সময় কামনা করতে। আর তুমি শহীদ হয়েছ মহান আল্লাহর দ্বীনের সবচেয়ে জঘন্য ঘৃণ্য শত্রু যায়নবাদী ইসরাইলের হাতে।
আর এটাই তো তোমার সুমহান মর্যাদা, সম্মান ও গৌরবের জন্য যথেষ্ট। বিশ্ববাসী এমনকি পশ্চিমা দেশগুলোয় বহু স্বাধীনচেতা তোমার জন্য শোক করছে। তোমার জন্য বিশ্বের সকল স্বাধীনচেতা মুক্তমনা আজ শোকাহত ও দুঃখ ভারাক্রান্ত। সবাই শোক প্রকাশ করছে। তোমার জন্য রোগশয্যায় মৃত্যু হতো নিতান্ত কলঙ্কজনক। তাই তোমাকে মহান আল্লাহ পুরস্কৃত করেছেন শাহাদাতের পুরস্কার দিয়ে। শাহাদাত তোমার শোভন ও সৌন্দর্য। শহীদ আয়াতুল্লাহ সাইয়েদ হাসান নাসরুল্লাহ নিজের জৈষ্ঠ্য সন্তান সাইয়েদ হাদী নাসরুল্লাহকে ইসরাইল ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী ইসলামী প্রতিরোধ সংগ্রাম ও জিহাদের সংগ্রামে উৎসর্গ করেছিলেন। ১৯৯৭ সালে সাইয়েদ হাদী নাসরুল্লাহ দখলদার আগ্রাসী ইসরাইলী বাহিনীর বিরুদ্ধে রণাঙ্গনে শাহাদাত বরণ করেন। তাহলে কেন তিনি লেবানন, ফিলিস্তিন, ইরাক, ইয়েমেন, সিরিয়া, আরব, আফ্রিকীয়সহ সকল মুসলিম দেশ ও বিশ্বের সকল স্বাধীনচেতা মুক্তমনা ব্যক্তির প্রিয়পাত্র হবেন না? ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলনের সকল নেতৃবৃন্দ বিশেষ করে শহীদ সাইয়েদ হাসান নাসরুল্লাহ নিজেদের জান, মাল ও প্রিয়জনদের খোদার রাহে উৎসর্গ করে জনগণকে এ পথে আহ্বান জানিয়েছেন।
আর এজন্যই তাদের এত জনপ্রিয়তা। এই ধরণের ব্যক্তিত্বদের শোকে জনগণ প্রকৃতই প্রিয়জন হারানোর শোকে মুহ্যমান হয়ে যায়। সালামুন আলাইকুম ইয়া শুহাদাআ ইযযাতিল উম্মাহ, ইয়া শুহাদাআল কুদস্ আস-সালামু আলাইকা ইয়া নাসরাল্লাহ (তোমাদের ওপর সালাম হে উম্মাহর ইযযত ও সম্মানের শহীদগণ, হে কুদসের শহীদগণ! তোমার ওপর সালাম হে নাসরাল্লাহ্! হে মহান আল্লাহর আউলিয়া (বন্ধু)! হে শহীদগণ! আমাদের জন্য দুআ করো যাতে মহান আল্লাহ আমাদেরকেও তোমাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে শাহাদাতের পরম সৌভাগ্য দান করেন। ইন্না ‘আলাল ‘আহ্দ্ (নিশ্চয়ই আমরা প্রতিজ্ঞার ওপর অটল ও অবিচল আছি)।
মুহাম্মদ মুনীর হুসাইন খান ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫