জীবনযাপনধর্ম ও বিশ্বাসবিশেষ সংবাদবিশ্ব

আল্লাহহীন সমৃদ্ধি: এক নিঃশব্দ পতন

ডক্টর মুহাম্মাদ ফারুক হুসাইন। প্রকাশ: ৮ নভেম্বর ২০২৫

মিডিয়া মিহির: জীবনের সুখ–স্বস্তি শুধু সম্পদে নয়; হৃদয়ে আল্লাহর স্মরণ থাকলে স্বল্প সামর্থ্যও শান্তির উৎস হয়। আর যে স্মরণ থেকে বিমুখ হয়—চোখ ভরা প্রাচুর্য নিয়েও অন্তর থাকে অন্ধকার, অস্থির ও অশান্ত। ধন-সম্পদে ভরপুর মানুষের অভাব থাকে না গাড়ি–বাড়িতে, সৌখিন জীবনযাপনে বা বিলাসিতার প্রদর্শনীতে। কিন্তু এর মাঝে কিছু মানুষ আছে—বাহ্যিক জ্যোৎস্নার নিচে গভীর অন্ধকারে নিমজ্জিত। তারা আল্লাহর স্মরণ থেকে দূরে। এই দূরত্বই তাদের প্রকৃত দারিদ্র্য।

হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল-মুসলিমিন আব্বাস আশজাঈ ইসফাহানি বলেন:কারণ প্রকৃত শান্তি আসে না সঞ্চয় থেকে—আসে স্মরণ থেকে।

قَالَ اللهُ تَعَالَى: ﴿وَمَنْ أَعْرَضَ عَنْ ذِكْرِي فَإِنَّ لَهُ مَعِيشَةً ضَنْكًا وَنَحْشُرُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَعْمَى
আর যে আমার স্মরণ থেকে বিমুখ হয়—আমি তার জীবিকা সংকীর্ণ করে দেব, এবং কিয়ামতের দিন তাকে অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করব। (সূরা ত্বা-হা, ২০:১২৪)

আল্লাহর স্মরণ থেকে বিমুখতার ফল

কুরআনের প্রতিটি আয়াত আলোর মতো, যা আত্মাকে জাগ্রত করে। এই আয়াত আমাদের জানায়—জীবনের সংকীর্ণতা ও অস্থিরতার মূল কারণ আল্লাহকে ভুলে যাওয়া।

আল্লাহ শুধুমাত্র জিহ্বার স্মরণ চান না; তিনি হৃদয়ের স্মরণ চান। কারণ-

কেবল শব্দ নয়—সংযোগই হলো প্রকৃত জিকির।

﴿وَأَقِمِ الصَّلَاةَ لِذِكْرِي﴾
আমার স্মরণ প্রতিষ্ঠার জন্য নামাজ কায়েম কর। (সূরা ত্বা-হা, ২০:১৪)

নামাজ হলো স্মরণের সর্বোত্তম রূপ। এটি হৃদয়ের আলো, আত্মার প্রশান্তি।

অনেক মানুষ খুব সামান্য সম্পদ নিয়ে জীবনযাপন করেন, তবুও তাদের মুখে প্রশান্তির হাসি থাকে। কারণ তাদের হৃদয়ে আল্লাহর স্মরণ রয়েছে—নামাজ রয়েছে, জিকির রয়েছে, কৃতজ্ঞতা রয়েছে।

আর অপরদিকে—

অনেকে অঢেল সম্পদ এবং অপরিসীম সুযোগ–সুবিধার মাঝে থেকেও ক্লান্ত, অস্থির ও নিঃসঙ্গ। কেন?

কারণ সে আল্লাহকে স্মরণ করে না। সে জিকির ও নামাজের মানুষ নয়।

বিমুখতার ভয়াবহ পরিণতি

আল্লাহ বলেন:

وَنَحْشُرُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَعْمَى
এবং কিয়ামতের দিন তাকে অন্ধ অবস্থায় উঠাব। (সূরা ত্বা-হা, ২০:১২৪)

দুনিয়ায় যে মানুষ আল্লাহর অসীম নেয়ামত দেখেও তা উপলব্ধি করে না, আল্লাহকে স্মরণ করে না এবং কৃতজ্ঞ হয় না, সে আসলে এই দুনিয়ার আলোতেও অন্ধ। তাই বিচার দিবসে তাকে অন্ধরূপে জাগানো হবে—সে যেভাবে দুনিয়ায় আচরণ করেছে, সেভাবেই পরিণতি।

রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেন:

«مَثَلُ الَّذِي يَذْكُرُ رَبَّهُ وَالَّذِي لَا يَذْكُرُ رَبَّهُ مَثَلُ الْحَيِّ وَالْمَيِّتِ»
যে ব্যক্তি আল্লাহকে স্মরণ করে এবং যে স্মরণ করে না—তাদের উদাহরণ জীবিত ও মৃতের মতো। (সহিহ বুখারি)

সত্যিকারের সম্পদ হৃদয়ের শান্তি। আর শান্তি আসে আল্লাহর স্মরণে।

আল্লাহ আমাদের স্মরণে রাখুক তাঁর পথে— জিহ্বায় জিকিরে, হাতে সৎকর্মে, চোখে নেয়ামতের দৃষ্টিতে, এবং হৃদয়ে আকিদার আলোতে।

اللَّهُمَّ اجْعَلْنَا مِنَ الذَّاكِرِين
হে আল্লাহ! আমাদেরকে আপনার স্মরণকারীদের অন্তর্ভুক্ত করুন।
আমিন।

আরও পড়ুন

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button