কুরআনকুরআন শিক্ষাজীবনযাপনতাফসীরধর্ম ও বিশ্বাসবিশেষ সংবাদবিশ্ব

আল্লাহর শাস্তি থেকে রক্ষা পাওয়ার পথ

ডক্টর মুহাম্মাদ ফারুক হুসাইন। প্রকাশ: ৪ অক্টোবর ২০২৫

মিডিয়া মিহির: আমীরুল মু’মিনীন ইমাম আলী (আ.) নাহজুল বালাগায় আল্লাহর শাস্তি থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষণীয় বাণী প্রদান করেছেন। এই বাণীটি তাঁর প্রজ্ঞা, জ্ঞান এবং কোরআনের ব্যাখ্যার আলোকে মুসলমানদের জন্য আজও প্রাসঙ্গিক।

দুইটি নিরাপদ আশ্রয়:

হিকমাত ৮৮:

کَانَ فِی الْأَرْضِ أَمَانَانِ مِنْ عَذَابِ اللّهِ وَ قَدْ رُفِعَ أَحَدُهُمَا، فَدُونَکُمُ الْآخَرَ، فَتَمَسَّکُوا بِهِ؛ أَمَّا الْأَمَانُ الَّذِی رُفِعَ فَهُوَ رَسُولُ اللّهِ (صلی الله علیه وآله)، وَ أَمَّا الْأَمَانُ الْبَاقِی فَالاسْتِغْفَارُ؛ قَالَ اللّهُ تَعَالَی “وَ ما کانَ اللّهُ لِیُعَذِّبَهُمْ وَ أَنْتَ فِیهِمْ وَ ما کانَ اللّهُ مُعَذِّبَهُمْ وَ هُمْ یَسْتَغْفِرُونَ

পৃথিবীতে আল্লাহর শাস্তি থেকে বাঁচার জন্য দুইটি নিরাপদ আশ্রয় বিদ্যমান ছিল। যার মধ্যে একটি সরানো হয়েছে, আর বাকি যেটি আছে, সেটিকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরে রাখতে হবে।

যে আশ্রয়টি তুলে নেওয়া হয়েছে, তা হলো রাসুলুল্লাহ(সা.) আল্লাহর রহমতের উজ্জ্বল বাতিঘর, যিনি জীবন ও আচরণের মাধ্যমে মানবজাতিকে দিশা দেখিয়েছিলেন। আর যে আশ্রয় এখনও আমাদের কাছে অবশিষ্ট, তা হলো ইস্তিগফার – পাপের ক্ষমা প্রার্থনা এবং আল্লাহর কাছে ফিরে যাওয়ার অনন্ত সূঁচ।

রাসুলুল্লাহ(সা.) রহমতের অবলম্বন

রাসুলুল্লাহ(সা.)মানবজাতির জন্য সর্বদা রহমতের প্রতীক ছিলেন। তাঁর জীবদ্দশায় আল্লাহর শাস্তি নেমে আসেনি। তাঁর অনুপস্থিতির পরেও, মুসলমানরা তাঁর শিক্ষা ও আদর্শের আলোকে পথ চলতে পারে।

কোরআন বলেছেন:

وَما أَرْسَلْناکَ إِلّا رَحْمَةً لِلْعالَمینَ

আমি তোমাকে শুধু সকল বিশ্বের জন্য রহমত হিসেবে প্রেরণ করেছি।” (সূরা আনবিয়া , ৫৬)

এটি প্রমাণ করে যে, রাসুলুল্লাহ (সা.)জীবদ্দশায় মুসলমানদের জন্য নিরাপদ আশ্রয়।

ইস্তিগফার – আল্লাহর রহমতের চাবিকাঠি

ইস্তিগফার আল্লাহর রহমত আকর্ষণের অন্যতম প্রধান উপায়। কোরআনে বলা হয়েছে:

قُلْ یا عِبادِیَ الَّذینَ أَسْرَفُوا عَلَی أَنْفُسِهِمْ لا تَقْنَطُوا مِنْ رَحْمَةِ اللّهِ إِنَّ اللّهَ یَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمیعاً إِنَّهُ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحیمُ

হে আমার বান্দাগণ যারা নিজেদের প্রতি অতিরিক্ত পাপ করেছেন, আল্লাহর রহমত থেকে হতাশ হোন না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সকল পাপ ক্ষমা করেন; তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল, দয়ালু।

সুতরাং, মুসলমানরা তওবা ও ইস্তিগফারের মাধ্যমে আল্লাহর শাস্তি থেকে নিরাপদ থাকতে পারে। ইস্তিগফার কেবল শাস্তি থেকে মুক্তি দেয় না, বরং আল্লাহর বরকত, ধন-সম্পদ, সন্তান এবং কল্যাণও আনতে পারে।

কোরআনের আরেকটি স্থান সূরা নূহে ইস্তিগফারের সুফল উল্লেখ করেছে:

اسْتَغْفِرُوا رَبَّکُمْ إِنَّهُ کانَ غَفّاراً * یُرْسِلِ السَّماءَ عَلَیْکُمْ مِدْراراً * وَیُمْدِدْکُمْ بِأَمْوال وَبَنِینَ یَجْعَلْ لَکُمْ جَنّات وَیَجْعَلْ لَکُمْ أَنْهارا

উপসংহার

আমীরুল মু’মিনীন ইমাম আলি (আ.) আমাদেরকে দুইটি মূল্যবান নিরাপদ আশ্রয় দেখিয়েছেন:

১. রাসুলুল্লাহ (সা.) জীবদ্দশায় অদ্বিতীয় নিরাপত্তা ও রহমতের প্রতীক।

২.ইস্তিগফার – তওবা ও ক্ষমা প্রার্থনার মাধ্যমে আল্লাহর রহমতের চাবিকাঠি।

এই শিক্ষণীয় বাণী আজও মুসলমানদের জন্য পথপ্রদর্শক। আল্লাহর নৈকট্য ও রহমতের জন্য আমাদের উচিত নিয়মিত ইস্তিগফার করা, যাতে আমরা শাস্তি থেকে নিরাপদ থাকি এবং জীবন ও আখিরাতে কল্যাণ লাভ করি।

পাদটীকা:

১. আনবিয়া, আয়াত ১০৭ – নবীদের জীবন ও শিক্ষার নির্দেশ।

২. যুমার , আয়াত ৫৩ – আল্লাহর ক্ষমা ও তাওবার গুরুত্ব।

৩. নূহ , আয়াত ১০-১২ – নূহ (আ.)-এর তাওবা ও ইস্তিগফারের বার্তা।

৪. ফী জিলালয়ে নাহজুল বালাগ, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ২৬৭ – হিকমতপূর্ণ ব্যাখ্যা ও প্রাসঙ্গিক উদাহরণ।

৫. আনফাল , আয়াত ৩৪ – নীতি ও ধর্মপ্রাণদের প্রতি আল্লাহর নির্দেশনা।

৬. তাফসিরে নুমুনা , খণ্ড ১ – সূরা আল-ফাতিহার আয়াতের বিশদ বিশ্লেষণ।

৭. মাসাদের নাহজুল বালাগা , খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ৮৫ – হাদিসের উৎস ও বিশ্বাসযোগ্যতা; তাবারসী, ফতাল নিশাবুরি ও সিবত বেন জোজি কর্তৃক সংযোজন ও ব্যাখ্যা।

আরও পড়ুন

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button