আল্লাহর নির্বাচিত বান্দা — প্রেরণার এক যাত্রা
ডক্টর মুহাম্মাদ ফারুক হুসাইন। প্রকাশ: ২ নভেম্বর ২০২৫
মিডিয়া মিহির: আল্লাহ যাকে চান, তাকেই নিজের নিকট টেনে নেন। আর যাকে চান না, তাকে বিশ্বের ব্যস্ততায় বিলীন করে দেন। এক দূরপথ পাড়ি দেওয়া সাহাবি নবীজির (সা.) কাছে এসে যে প্রশ্ন করেছিলেন— “আল্লাহ কাকে চান, আর কাকে চান না?” — সেই উত্তরে লুকিয়ে আছে হৃদয় পরিশুদ্ধ করার গভীর শিক্ষা।
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন— একদিন আমরা নবীজি ﷺ -এর পাশে বসে ছিলাম। হঠাৎ একজন সওয়ারি এসে তাঁর উট বসিয়ে দিলেন এবং শ্রদ্ধাভরে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল ﷺ! আমি সাত দিনের পথ পাড়ি দিয়ে আপনার কাছে এসেছি। আমার শরীর ক্লান্ত, রাতগুলো জাগরণে কেটেছে, দিনে খাদ্য ও পানীয় ত্যাগ করেছি। এমনকি আমার উটও এখন অবসন্ন। আমি শুধু দুটি প্রশ্ন করার জন্য এই দীর্ঘ যাত্রা করেছি— এমন প্রশ্ন, যা আমাকে ঘুমাতে দেয়নি। নবীজি ﷺ তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার নাম কী? তিনি বললেন,যায়দুল খায়ল (অশ্বারোহী যায়দ)। নবীজি ﷺ হাসিমুখে বললেন, না, তুমি হলে যায়দুল খায়র — কল্যাণের যায়দ। এখন বলো, তোমার প্রশ্ন করো। বহু জটিল প্রশ্নের উত্তর আজ দেওয়া হবে। তখন যায়দ বললেন,হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহ যাকে ভালোবাসেন— তার চিহ্ন কী? আর যাকে ভালোবাসেন না— তার চিহ্ন কী? নবীজি ﷺ জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কেমনভাবে সকাল করেছ? যায়দ উত্তর দিলেন, আমি সকাল করেছি সৎকাজ ও সৎকর্মশীলদের প্রতি ভালোবাসার অনুভূতি নিয়ে।যদি আমি কোনো ভালো কাজ করি, মনে দৃঢ় বিশ্বাস জাগে যে এর প্রতিদান আমি পাব। আর যদি কোনো ভালো কাজ করতে ব্যর্থ হই, তখন হৃদয় কেঁদে ওঠে। নবীজি ﷺ বললেন, শোনো যায়দ, এটাই আল্লাহর প্রিয় বান্দার চিহ্ন— যাকে তিনি চান, তার অন্তরে এমন অনুভূতি জাগিয়ে দেন। আর যাকে তিনি চান না, তার চিহ্ন হলো— সে কেবল অন্যদের জন্যই সৃষ্টি হয়, তাদের পেছনে ব্যস্ত থাকে; নিজের পরিণতি নিয়ে চিন্তা করে না।
যদি সে কোনো উপত্যকায় ধ্বংসও হয়ে যায়, তবু তার হৃদয় কাঁদে না
এই হাদিস আমাদের শেখায়— আল্লাহর প্রিয় বান্দা হতে হলে কেবল বাহ্যিক ইবাদত নয়, বরং অন্তরের জাগরণ প্রয়োজন। যে মানুষ ভালো কাজে আনন্দ পায়, অন্যদের কল্যাণে ভালোবাসা অনুভব করে, আর সৎকাজে ব্যর্থ হলে ব্যথিত হয়—
সেই মানুষই আল্লাহর বিশেষ নির্বাচিত বান্দা।
সূত্র: ইবন আবি আসিম, আস-সুন্নাহ — আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ (রা.) হতে বর্ণিত।



