জীবনযাপনধর্ম ও বিশ্বাসবিশেষ সংবাদবিশ্ব

আখিরাতেও কি পর্দা ও মাহরাম–নামাহরামের বিধান বিদ্যমান?

ডক্টর মুহাম্মাদ ফারুক হুসাইন। প্রকাশ: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫

মিডিয়া মিহির: ইহজীবনে মানুষের সামাজিক ও পারিবারিক সম্পর্ক শরিয়তের বিধান—যেমন মাহরাম ও না-মাহরামের নিয়ম—দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। কিন্তু মৃত্যুর পর, যখন মানুষ বরযখ, কিয়ামত ও আখিরাতের বিভিন্ন স্তরে প্রবেশ করে, তখন কি এই পরিচিত সীমারেখাগুলো আগের মতোই কার্যকর থাকে? নাকি সেসব জগতের সম্পর্ক গড়ে ওঠে দেহ, সময় ও পার্থিব বিধানের ঊর্ধ্বে থাকা ভিন্ন এক বাস্তবতার ভিত্তিতে? এই প্রশ্নের বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন হাওযা-সংশ্লিষ্ট ধর্মীয় সংশয়–বিশেষজ্ঞ হুজ্জাতুল ইসলাম রেজা পারচে-বাফ।

হুজ্জাতুল ইসলাম রেজা পারচে-বাফ আখিরাতের বিভিন্ন স্তর—বরযখ, কিয়ামত, জান্নাত ও জাহান্নাম—আলাদা করে ব্যাখ্যা করেছেন এবং প্রতিটি স্তরে সম্পর্ক, সীমারেখা ও মর্যাদার নিজস্ব বিধান ও প্রকৃতি রয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন।

দুনিয়ার জীবনে মানুষের সম্পর্ক মাহরামিয়তসহ বিভিন্ন শরিয়তি দায়িত্ব ও বিধানের ওপর প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু আত্মা যখন দুনিয়ার জীবন ত্যাগ করে বরযখ, কিয়ামত ও আখিরাতে প্রবেশ করে, তখন কি এই পার্থিব সীমাবদ্ধতাগুলো বজায় থাকে, নাকি সেখানে সম্পর্ক গড়ে ওঠে দেহ ও সময়ের ঊর্ধ্বে থাকা গভীরতর সত্যের ভিত্তিতে—এই প্রশ্নটিই আলোচনার কেন্দ্রে ছিল। হাওযা নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ বিষয়েই আলোকপাত করেন।

প্রশ্ন: আখিরাত, বরযখ ও কিয়ামতেও কি মাহরাম ও নন-মাহরামের বিধান রয়েছে? থাকলে তা কী রূপে বিদ্যমান?

উত্তর (হুজ্জাতুল ইসলাম রেজা পারচে-বাফ):

আখিরাতের জগতে—যার মধ্যে বরযখ, জান্নাত ও জাহান্নাম অন্তর্ভুক্ত—মাহরাম ও না-মাহরামের ধারণা দুনিয়ার মতো করে বিদ্যমান নয়।

মৃত্যুর পর প্রকৃতির আইন ও মানবিক সম্পর্কের সেই কাঠামো, যা দুনিয়ায় মাহরামিয়তের ভিত্তিতে গড়ে ওঠে, বরযখ বা কিয়ামতে আর কার্যকর থাকে না। কারণ সেই জগতের অস্তিত্বগত প্রকৃতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। সেখানে মানুষের উপস্থিতি বিশেষ ধরনের রূহানী–মাদ্দী বৈশিষ্ট্য বহন করে; যেমন—জান্নাতবাসীদের জন্য নূরানি পোশাক এবং জাহান্নামবাসীদের জন্য আগুনসদৃশ অবস্থা—যার কথা ধর্মীয় বর্ণনায় এসেছে।

অতএব, আখিরাতে মাহরাম ও না-মাহরাম দুনিয়ার মতো শরিয়তি কাঠামো হিসেবে বিদ্যমান নয়।

বরযখে, যেহেতু পার্থিব দেহ অনুপস্থিত, তাই দুনিয়ার মাহরামিয়তসংক্রান্ত বিধান সরাসরি প্রযোজ্য হয় না।

১. কিয়ামতে (হাশরের ময়দানে): মাহরাম ও না-মাহরামের পার্থক্য এক ধরনের পরিচয় হিসেবে বোঝা যেতে পারে এবং নন-মাহরামের প্রতি লজ্জাবোধ একটি আধ্যাত্মিক অনুভূতি হিসেবে টিকে থাকতে পারে; তবে তা কোনো শরিয়তি ফরজ বা বিধান হিসেবে নয়, বরং মানুষের অন্তর্গত মানসিক অবস্থার প্রকাশ।

২. জান্নাতে: আত্মীয়তা ও বৈবাহিক সম্পর্কজনিত মাহরামিয়ত মর্যাদা ও পবিত্রতা রক্ষার জন্য এক ধরনের আধ্যাত্মিক সীমারেখা হিসেবে থাকতে পারে। তবে সেখানে সম্পর্ক হবে সম্পূর্ণরূপে উন্নত, পরিশুদ্ধ ও দুনিয়ার কামনা–বাসনার ঊর্ধ্বে।

৩. মূলত পর্দা, দৃষ্টি সংযম বা মাহরামিয়তসংক্রান্ত সব শরিয়তি দায়িত্ব কেবল দুনিয়ার জীবনের জন্য নির্ধারিত। আখিরাতে মানুষ থাকবে প্রতিদান ও প্রতিফলের অবস্থায়—সেখানে আর কোনো তাকলিফ বা বিধান পালনের দায়িত্ব থাকবে না, বরং থাকবে ফলভোগ ও চূড়ান্ত বাস্তবতার সম্মুখীন হওয়া।

আরও পড়ুন 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button