অপচয়বিরোধী চিন্তা: তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ীর ধারাবাহিক অবস্থান
রাসেল আহমেদ | প্রকাশ: ২রা ডিসেম্বর, ২০২৫
মিডিয়া মিহির: হাওজা নিউজ এজেন্সির সাম্প্রতিক বিশ্লেষণে স্পষ্ট করা হয়েছে— গত তিন দশকেরও অধিক সময় ধরে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ী অপচয়, অতিভোগ এবং অকার্যকর ব্যয়-সংস্কৃতির বিরুদ্ধে নিরবচ্ছিন্নভাবে অবস্থান নিয়ে আসছেন। তাঁর বক্তব্য থেকে প্রতীয়মান হয়, সঠিক ভোগব্যয় কেবল নৈতিক বা ধর্মীয় দায়িত্ব নয়; বরং জাতীয় উন্নয়ন, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের অপরিহার্য ভিত্তি।
দীর্ঘমেয়াদি নীতিগত ধারাবাহিকতা
বাসিজ সপ্তাহ উপলক্ষে সাম্প্রতিক ভাষণে জ্বালানি, খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সম্পদের অপচয় রোধে যে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে, তা মোটেও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। ১৯৮৯ সাল থেকে তিনি পশ্চিমা ভোগবাদী সংস্কৃতির প্রভাব মোকাবিলা এবং বিনয়ী, প্রয়োজনভিত্তিক ও উদ্দেশ্যনির্ভর ব্যয়-সংস্কৃতি গঠনের ওপর জোর দিয়ে আসছেন—যা ইসলামী সমাজ বিনির্মাণের একটি মৌলিক উপাদান হিসেবে বিবেচিত।
এই ধারাবাহিকতা প্রমাণ করে যে ভোগব্যয়ের প্রশ্নটি তাঁর নীতিনির্ধারণী দর্শনে একটি কাঠামোগত কেন্দ্রীয় বিষয়।
ভোগব্যয় সংস্কার: নীতিগত অগ্রাধিকারের রূপ
১৯৯২ সালের নওরোজ বার্তায় অপচয় ত্যাগের আহ্বান এবং ২০০৯ সালকে “ব্যয়-ব্যবহারের সংস্কারের বছর” ঘোষণা করা—উভয়ই ইঙ্গিত দেয় যে এই বিষয়টি তাঁর নীতি-অভিলাষে প্রাতিষ্ঠানিক স্তরে উন্নীত হয়েছে।
এর আরও সুস্পষ্ট প্রকাশ দেখা যায় ২০১৩ সালে ঘোষিত অর্থনৈতিক প্রতিরোধ (اقتصاد مقاومتی) নীতিমালায়, যেখানে “ব্যয়-সংস্কারের উন্নয়ন, অপচয় বর্জন এবং সম্পদ ব্যবস্থাপনার দক্ষতা”কে জাতীয় অর্থনীতির কেন্দ্রীয় স্তম্ভ হিসেবে নির্ধারণ করা হয়।
এটি দেখায়—সঠিক ভোগব্যয় কেবল আচরণগত নির্দেশনা নয়; বরং একটি কৌশলগত অর্থনৈতিক নীতি।
দ্বৈত দায়িত্ব কাঠামো: রাষ্ট্র ও জনগণ
সাম্প্রতিক বক্তব্যে সর্বোচ্চ নেতা রাষ্ট্রীয় দায়িত্বশীলদের জবাবদিহিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। বায়তুলমালের অপব্যবহার প্রসঙ্গে তিনি ব্যক্তিগত বা গোষ্ঠীগত স্বার্থে সরকারি সম্পদ ব্যবহারের বিষয়টিকে ন্যায়নীতির লঙ্ঘন হিসেবে উল্লেখ করেন।
ফলে নেতৃত্বের বক্তব্যে একটি সমন্বিত কাঠামো ফুটে ওঠে—
– রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের নৈতিক-প্রশাসনিক দায়িত্ব
– জনগণের আচরণগত দায়িত্ব
উভয়ই পরস্পর-সম্পূরক।
দেশটির রাষ্ট্রপতি পেজেশকিয়ানের অভিজ্ঞতা— যেখানে সর্বোচ্চ নেতা নিজ কক্ষের আলো কমিয়ে জ্বালানি সাশ্রয়ের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন—প্রত্যক্ষ দৃষ্টান্ত-নেতৃত্বের (exemplary leadership) উদাহরণ হিসেবে উল্লেখযোগ্য।
মিডিয়া ও ভোগ-সংস্কৃতি: প্রভাব ও বৈপরীত্য
গবেষক হুজ্জাতুল ইসলাম হাবিব বাবাই উল্লেখ করেন—আধুনিক মিডিয়া, বিশেষত ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলো, অতিভোগের একটি শক্তিশালী কাঠামোগত উৎসে পরিণত হয়েছে। যদিও টেলিভিশন বিজ্ঞাপন নীতিমালার ২৪ নম্বর ধারায় অতিভোগে উৎসাহ নিষিদ্ধ, বাস্তবে অনেক বিজ্ঞাপনই অতিরিক্ত ভোগ-প্রবণতা সৃষ্টি করে।
এটি নীতিনির্ধারণী কাঠামো ও বাস্তব প্রয়োগের ফাঁক বা বিচ্যুতি নির্দেশ করে।
তাত্ত্বিক মূল্যায়ন: অপচয়ের সমাজনৈতিক প্রভাব
সর্বোচ্চ নেতার দৃষ্টিতে অপচয় কেবল অর্থনৈতিক ক্ষতি নয়; বরং এটি একটি “সামাজিক রোগ”—যার নেতিবাচক প্রভাব বিস্তৃত হয়—
-
জাতীয় উৎপাদন ও সম্পদ বণ্টনে,
-
সাংস্কৃতিক মূল্যবোধে,
-
নৈতিক আত্মনিয়ন্ত্রণে,
-
ব্যক্তির মানসিক সুস্থতা ও জীবনযাত্রায়।
পরিমিত, যুক্তিনির্ভর ও কৃতজ্ঞতাসহ ভোগব্যয় তাঁর মতে শুধু ইসলামী জীবনযাত্রার বৈশিষ্ট্যই নয়; বরং ভবিষ্যৎ ইসলামী সভ্যতার নরম অবকাঠামো গঠনের অপরিহার্য ভিত্তি।



